চাই সঠিক ও আদর্শ রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৯:৩৮:০৪ সকাল



গণতান্ত্রিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক দিকের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করা। এ উদ্দেশ্যে, আমেরিকা, ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য, ভারত এবং আয়ারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কতকগুলো মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নীতিগুলো হচ্ছে রাষ্ট্র শাসনের মূলমন্ত্র। যেকোন সরকারের কর্তব্য হলো রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে এগুলোকে বাস্তবায়ন করা। অনুরূপভাবে, বাংলাদেশের সংবিধানেও কতকগুলো রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মহান সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, “যে সকল মহান আদর্শ বা চেতনা আমাদের বীর বাঙালি জাতিকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদেরকে প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তা হল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা এ মহান সংবিধানের মূলনীতি হবে”। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে ৮নং অনুচ্ছেদ থেকে ২৫নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দ্বারা সেই স্বাধীনতার পর থেকেই বহুল সমালোচিত এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহল বরাবরের মতোই বাংলার সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ভুল বুঝিয়ে, জনমনে এ নীতিটি সম্পর্কে গুজব ও অপপ্রচার রটিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে থাকে। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে একটু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা একান্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্র একটি স্বাধীন ভূখণ্ড তথা সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। কোন ব্যক্তি বিশেষ নয় বলে এর নিজের বিশেষ কোন ধর্ম পালন করা আবশ্যক নয়। কিন্তু রাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের ধর্ম-কর্ম পালনে সুযোগ সুবিধা প্রদান করার এবং নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের তথা সরকারের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের কাছে সকল ধর্মাবলম্বীরা সমান। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে বৈষম্য করা যাবে না, নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার তাই বলে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। মূল সংবিধানে বলা হয়েছিলো যে, বাংলাদেশে কোন বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে না। জনগনের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে। কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির প্রতি বিশেষ সুযোগ সুবিধা বা তার প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। মোট কথা, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন হতে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করাই হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য। সুতরাং ধর্ম নিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়। তবে ধর্মকে পূজি করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিও কাম্য নয়।

বিষয়: রাজনীতি

১১১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File