চাষীদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে লবণসহিষ্ণু দেশি পাট-৮

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০২ আগস্ট, ২০১৭, ০৬:০১:০৩ সন্ধ্যা



দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত জমিতে বিজেআরআই উদ্ভাবিত দেশি পাট-৮ জাতের পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে বছরের পর বছর পরিত্যক্ত থাকা জমিতে পাট আবাদ করে চাষীরাও খুব খুশি। বিজেআরআই উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু দেশি পাট-৮ এখন উপকূলীয় অঞ্চলের চাষীদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে, এক ফসলী জমিতে এখন দুটি ফসল আবাদের। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততাকে জয় করেছে নব উদ্ভাবিত এই জাতের পাট। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৮ জেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৩০ শতাংশ। চাষযোগ্য এই জমির মধ্যে ১০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিই বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত। দিন দিন এই লবণাক্তার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর খরিফ-১ মৌসুমে এই বিশাল পরিমাণ জমি পতিত পড়ে থাকে। এই পতিত জমিতেই গত দুই বছর ধরে বিজেআরআই উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু দেশি পাট-৮ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কৃষক। লবণসহিষ্ণু আমন ধান চাষে সফলতার পর পাট চাষে এই সফলতা কৃষকদের নতুন করে আশাবাদী করে তুলেছে। চাষীরা মনে করছে, এখন আর এক ফসলের পর তাদের লবণাক্ত জমি পতিত থাকবে না। এখন থেকে তারা পাট এবং আমন দুটি ফসলই আবাদ করতে পারবে। বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) উর্ধতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে ঘুরে দেখতে পেয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে লবণ সহিষ্ণু জমিতে পাট চাষে সফলতা আসায় কৃষক এখন ব্যাপক উচ্ছ্বসিত। এছাড়া সরকার পাট চাষে প্রশিক্ষন দেয়া, নানা উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়ায় অনেকেই এখন পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছে। উপকূলের বিশাল লবণাক্ত জমিকে খরিফ-১ মৌসুমে পাট চাষের আওতায় আনার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের উদ্ভাবিত মধ্যম মাত্রার লবণসহিষ্ণু দেশি পাট-৮ এবং উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু চারটি নতুন জাতের পাট উপকূলীয় অঞ্চলের ৬টি জেলার ৬টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ শুরু করে। এই উপজেলাগুলো হলো- বরগুনা জেলার বেতাগী, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, খুলনার দাকোপ, বাগেরহাট জেলার মোরলগঞ্জ এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলা। প্রতি উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে নির্বাচিত করে তাদের প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস ও মতবিনিয়ের মাধ্যমে দেশি পাট-৮ ও অপর চারটি নতুন জাত আবাদের উপযোগী করে তোলা হয়। এর মধ্যে পর পর দুই মৌসুমেই দেশি পাট-৮ জাতের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে এ বছর প্রতিটি পর্যবেক্ষণ মাঠেই পাট গাছগুলো যেমন মোটা এবং তেমনি লম্বা হয়েছে। যা উপকূলীয় অঞ্চলে পাট চাষে কৃষকদের নতুন করে আশাবাদী করে তুলেছে। নতুন জাতের লবণসহিষ্ণু দেশি পাট-৮ চাষের মধ্য দিয়ে উপকূলের অর্থনীতিতে পাট খাতে একটি বিপ্লব সাধিত হচ্ছে এবং কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্রমশ আরও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।

বিষয়: বিবিধ

৬৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File