জিআই কথন

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৫:৫১:১৫ বিকাল



সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বর্তমানে প্রতিটি জাতিই নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হয়ে উঠছে, চাইছে নিজস্ব স্বকীয়তার আলাদা স্বীকৃতি। এ কারণেই গ্লোবাল ইনডেক্স (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের বিষয়টি এখন সারাবিশ্বে গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতিটি দেশই এখন তার নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণকারী পণ্যের স্বত্ব সংরক্ষণে তৎপর। একটি দেশ কোন পণ্যকে একবার তার নিজস্ব জিআই পণ্য

হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করলে পরবর্তীতে বিশ্বের আর কোন দেশ এর স্বত্ব দাবি করতে পারে না। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউআইপিও)এ স্বত্ব প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্য জামদানি শাড়ি। ভারত প্রথমেই এ শাড়ির স্বত্ব নিয়ে নেয়াতে স্বত্ব ফিরে পেতে পরবর্তীতে আইনি লড়াই চালাতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার এবার দেশের ঐতিহ্যবাহী ৯৫টি পণ্যের জিআই স্বত্ব পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রাজশাহী সিল্ক, কুমিল্লার রসমালাই, যশোরের খেজুরগুড়, মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, বগুড়ার নকশিকাঁথা, বাগেরহাটের চিংড়ি উল্লেখযোগ্য। অনুমোদন পেলেই এগুলোর একক মালিকানা স্বত্ব পাবে বাংলাদেশ। অন্য কোন দেশ এসব পণ্যের একই নামে মালিকানা দাবি করতে পারবে না। দেশে-বিদেশে এসব পণ্যের ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ ও সুনামের দাবিদার হবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি)রেজিস্ট্রারকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জিআই পণ্যের বিষয়টি বিশ্ব দরবারে সম্মান অর্জনের পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ারও একটি বড় সুযোগ। তবে জিআই পণ্যের সনদ পেতে হলে পণ্যটি কোন এলাকায় সহজে পাওয়া যায়, এতে ঐ এলাকার কি কি ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, পণ্যের বিশেষত্ব কি, উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলবায়ু, মাটি ও পানি কতটা উপযোগী, ঐ এলাকায় কোন নদী বা সমুদ্র আছে কিনা, কোন জনগোষ্ঠী পণ্যটির উপর নির্ভরশীল বা তাদের আয়ের একমাত্র উৎস কিনা, তারা কত সময় ধরে এ পণ্য থেকে কি পরিমাণ আয় করছে - এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। এসব শর্ত বিবেচনায় নিয়েই ডিপিডিটি উল্লেখিত ৯৫টি পণ্যের মেধাস্বত্ব দাবিতে কোন বাধা নেই বলে জানিয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পেলে এসব পণ্যের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়ে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়াতে এগুলো একেকটি রফতানি খাত হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আলাদা স্তম্ভ হয়ে উঠবে। বলা বাহুল্য, আমাদের এমন সব প্রাকৃতিক ও উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী রয়েছে, যেগুলোর ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। এসব পণ্যের দাবিদার একমাত্র আমরাই। এগুলো আমাদের নিজস্ব সম্পদ, গর্বের অনুসঙ্গ। তবে ইতোপূর্বে যথাযথ উদ্যোগ না নেয়ায় বিভিন্ন সময়ে আমাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী পণ্যের জিআই সনদ অন্য দেশ নিয়ে গেছে বা নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের পণ্য অন্য দেশের হয়ে যাবে এবং তারা রফতানি করে ব্যবসা করবে, তা মোটেও হতে দেয়া যায় না। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্যকে জিআই সনদভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিবে – এটাই সময়ের দাবি।জিআই স্বত্ব লাভের মাধ্যমে দেশের ঐতিহাসিক মর্যাদা সম্পন্ন পণ্য রফতানির অফুরন্ত সম্ভাবনার সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় শামিল হওয়া যাবে, খুলবে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন নতুন দুয়ার। অর্থনৈতিক এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে জিআই সনদ পাওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রফতানি উপযোগী করে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগও নিতে হবে। সরকার জিআই পণ্যের বিষয়ে একটি একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিবে, এটাই প্রত্যাশিত।



বিষয়: বিবিধ

৮২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File