গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটোর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৩৪:১৯ রাত



সম্প্রতি আমেরিকার রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ একটি জরিপভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের তুলনায় উন্নয়নকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। অর্থাত্ গণতন্ত্র যদি না থাকে অথবা নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলেও ক্ষতি নেই। যারা গণতন্ত্রকে পেছনে রেখে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেন তাদের মতে গণতন্ত্রের রাজনীতি উন্নয়নের পথে একটা বাধা। যেখানে এই বাধা নেই সেই সব দেশ দ্রুত উন্নতি করেছে, এমন যুক্তির অবতারণা করা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা হয় সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা। এই সব দেশে নিকট অতীতে অগণতান্ত্রিক শাসন পরিচালনা করে কতিপয় ‘লৌহমানব’ তাদের দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করেছিলেন যে কথার ওপর জোর দেয়া হয়ে থাকে। এর উত্তরে বলা যায় যে, এই তিনটি দেশ ছাড়াও এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় আরো বেশকিছু দেশ ছিল যেখানে গণতন্ত্রের পরিবর্তে বছরের পর বছর চলেছে স্বৈরাচারী শাসন। এশিয়ায় মিয়ানমার এবং পাকিস্তানের কথা বলা যায়। এ দুটি দেশ দীর্ঘ সময় সামরিক শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হলেও উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। আফ্রিকার কঙ্গো, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়ায় ‘লৌহমানব’ নেতা শাসন করলেও তাদের উন্নতি উল্লেখযোগ্য নয়। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের অধীনে উন্নতি সাধন করেছিল তাদের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতাদের জন্য। এমন নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক দেশে থাকলে সে সব দেশও উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। এর দৃষ্টান্ত মালয়েশিয়া। গণতন্ত্রে উন্নয়ন অর্জিত হয় সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে। এই সব দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নও সম্ভব হয়। যখনই জাতীয় সম্পদ বিশেষ শ্রেণির কুক্ষিগত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় সেই সময় বাক-স্বাধীনতা থাকার জন্য তার বিরুদ্ধে সমালোচনা গড়ে ওঠে। জনমতের জন্য সমতার ভিত্তিতে না হলেও সম্পদ অর্জন কোনো একটি শ্রেণির একচেটিয়া অধিকারে আসতে পারে না। ধনী শ্রেণির সঙ্গে আঁতাত বেঁধে শাসক শ্রেণি সংখ্যাগরিষ্ঠের আশা-আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করার সুযোগ পায় না গণতন্ত্রে। মিডিয়া এবং সিভিল সোসাইটি সদা জাগ্রত থেকে জনস্বার্থের সপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শাসক শ্রেণি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবার সুযোগ পায় না। জনপ্রিয়তা অর্জন ও তা অক্ষুণ্ন রাখার জন্যে গণতন্ত্রে শাসক শ্রেণিকে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করতে হয়। এর ফলে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা থাকে। নির্বাচন, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং স্বাধীন গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার ফলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা অব্যাহত না থাকলে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও শক্তির বিকাশ না ঘটলে কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালিত হয় সেখানে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। উন্নয়নের এই ধীর গতির জন্য গণতন্ত্রকে দায়ী করা হলে ভুল হবে। গণতন্ত্র যেন কার্যকর হতে পারে তার প্রতিই গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।অচিরেই সুসময় আসবে যা নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র তার ভূমিকা রাখবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনীতি সচেতন মানুষের চির জাগ্রত সচেতনতা। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ইন্টারনাল ভিজিন্যান্স’। এই চির জাগ্রত সচেতনতা একদিকে যেমন মানুষের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে উন্নয়নের জন্য অনুকূল পরিবেশও সৃষ্টি করতে পারবে। এমন হলে জোর গলায় বলা যাবে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটোই কাম্য। কেননা তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

বিষয়: রাজনীতি

৯৭৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360293
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:২৭
সামছুল লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট অনেক কিছু জানতে পারলাম! অনেক ধন্যবাদ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File