তাফসীর: সূরা ২৯ আনকাবুত: ২৮-৩৫ (পৃথিবীতে প্রথম সমকামিতা চালু করে লূত আ.-এর সমপ্রদায়)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১২ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৩:০৯:৪২ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম



وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ

২৮. স্মরণ কর লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তো এমন অশ্লীল কর্ম করছ, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করে নি।



তাফসীর: হযরত লুত(আHappy হযরত ইব্রাহিমের(আHappy ভ্রাতুষ্পুত্র।তার পিতার নাম ছিল হারান।হযরত লুত(আHappyশৈশবে হযরত ইব্রাহিম(আHappyএরই তত্বাবধানে পালিত হন।হযরত লুত(আHappyও উনার স্ত্রী সবসময়ই হযরত ইব্রাহিমের(আHappy সাথে ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে সদোম ও গোমোরাহ নামক শহরদ্বয়ের অধিবাসীদের নবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

এখানে অশ্লীল কর্ম বলতে সমকামিতা (পুরুষে-পুরুষে যৌন-মিলন)-কে বুঝানো হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে লূত (আঃ)-এর জাতিই এ কাজ সর্বপ্রথম শুরু করেছিল; যেমন কুরআন তা স্পষ্ট করেছে।

أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ ۖ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَنْ قَالُوا ائْتِنَا بِعَذَابِ اللَّهِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

২৯. তোমরা কি পুরুষের সাথে সমকাম করছ, তোমরা পথ অবরোধ করছ এবং নিজেদের মজলিসে ঘৃণ্য কাজ করছ?’ উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এই বলল যে,‘আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন কর; যদি তুমি সত্যবাদী হও।’



তাফসীর: "তোমরা রাস্তা বন্ধ করছো" এর কয়েকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যেমন, তোমরা আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের, নবাগত মুসাফির ও পথচারীদেরকে ধরে ধরে জোরপূর্বক তাদের সাথে অশ্লীল কর্ম করছ। যার কারণে মানুষের রাস্তা চলা কঠিন হয়ে পড়েছে ও স্বগৃহে অবস্থান করাকে নিরাপদ মনে করেছে। এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হল, তোমরা পথিকদের সম্পদ লুটে নাও, তাদেরকে হত্যা কর বা তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ কর। তৃতীয় ব্যাখ্যা এই করা হয়েছে যে, তোমরা খোলা রাস্তায় অশ্লীল কর্ম কর, যার কারণে পথচারীদের পথ চলতেও লজ্জাবোধ হয়। আর এই সকল অবস্থায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেন, (পথ অবরোধের) বিশেষ কোন কারণ নির্ণয় করা কঠিন। তবে তারা এমন কাজ করত যার কারণে রাস্তা অচল হয়ে পড়ত।

‘রাস্তা বন্ধ’ করার অন্য একটি ব্যাখ্যা বংশ অবরোধ করা হয়েছে; অর্থাৎ, স্ত্রীদের যোনি ব্যবহার ব্যতিরেকে পুরুষদের পায়ুপথ ব্যবহার করে নিজেদের বংশও শেষ করতে বসেছ।

মজলিসে ঘৃণ্য কাজ কী ছিল? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত রয়েছে; যেমন লোককে পাথর ছুঁড়ে মারা, অপরিচিত মুসাফিরদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, ভরা মজলিসে পরস্পর (সশব্দে) বাতকর্ম করা, এক অপরের সামনে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া, শতরঞ্জ জাতীয় খেলা খেলা, পায়রা উড়িয়ে খেলা, মেহেদি দিয়ে (পুরুষের) হাতের আঙ্গুল রঙানো প্রভৃতি। ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেন, হতে পারে তারা উক্ত সকল পাপেই লিপ্ত হত।

قَالَ رَبِّ انْصُرْنِي عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِينَ

৩০. সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।

وَلَمَّا جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَىٰ قَالُوا إِنَّا مُهْلِكُو أَهْلِ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ ۖ إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوا ظَالِمِينَ

৩১. যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা জালেম।



তাফসীর: যখন লূত (আঃ) নিজ জাতির সংশোধন হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে গেলেন, তখন মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলেন। এবং লূত (আঃ)-এর দু’আ কবুল হল । মহান আল্লাহ লূত-জাতিকে ধ্বংস করার জন্য ফিরিশতাও প্রেরণ করলেন। তাঁরা প্রথমে ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট গেলেন ও তাঁকে ইসহাক ও ইয়াকূব দুই সন্তানের সুসংবাদ দিলেন এবং সেই সঙ্গে এ কথাও শুনিয়ে দিলেন যে, আমরা লূত (আঃ)-এর বস্তি ধ্বংস করতে এসেছি।

قَالَ إِنَّ فِيهَا لُوطًا ۚ قَالُوا نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَنْ فِيهَا ۖ لَنُنَجِّيَنَّهُ وَأَهْلَهُ إِلَّا امْرَأَتَهُ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ

৩২. সে (ইব্রাহীম আ.) বলল, এই জনপদে তো লূতও রয়েছে। তারা (ফেরেশতারা) বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভাল জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।



وَلَمَّا أَنْ جَاءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَقَالُوا لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ ۖ إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ

৩৩. যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেল। তারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।



তাফসীর: তাঁর নিকট ফিরিশতা এলে তাঁদেরকে দেখে তিনি চিন্তিত হলেন আর তার জাতির অপকর্মের কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল। (তিনি তাঁদের আগমনকে অপছন্দ করলেন, বিষণ্ণ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন) এবং ভয় পেয়ে গেলেন। কারণ তাঁর নিকট যে সমস্ত ফিরিশতা (সুদর্শন কিশোর) মানুষের রূপ ধরে এসেছিলেন, তাঁদেরকে তিনি মানুষই ভেবেছিলেন। সুতরাং নিজ জাতির বদ অভ্যাস ও উদ্ধত আচরণের জন্য এই ভয় পেলেন যে, যদি তারা এই সকল সুদর্শন মেহমানদের আসার খবর জানতে পারে, তাহলে তারা বলপূর্বক এদের সাথে অশ্লীল কাজ করতে চাইবে, যার কারণে আমি অপমানিত হব। ضَاقَ بِهِم ذَرعًا (তাদের কারণে তার হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল) কথায় তাঁর অক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন ضَاقَت يَدُه (হাত সংকীর্ণ হওয়ার) কথা বলে দরিদ্র হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। অর্থাৎ, ঐ সকল সুশ্রী চেহারাবিশিষ্ট মেহমানদেরকে বদ-অভ্যাসে অভ্যাসী জাতির হাত হতে বাঁচানোর যখন কোন রাস্তা খুঁজে পেলেন না, তখন তিনি চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হলেন।

إِنَّا مُنْزِلُونَ عَلَىٰ أَهْلِ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ

৩৪. আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের উপর আকাশ থেকে আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে।



তাফসীর: আকাশের শাস্তি বলতে ঐ শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে, যার দ্বারা লূত জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। জিব্রাঈল (আঃ) তাদের জনপদগুলোকে শূন্যে তুলে নিয়ে গিয়ে উল্টে দিলেন। তারপর তাদের উপর পাথর বর্ষণ করা হল এবং ঐ জায়গাটিকে একটি অতি দুর্গন্ধময় উপসাগরে পরিণত করা হল। (ইবনে কাসীর)

وَلَقَدْ تَرَكْنَا مِنْهَا آيَةً بَيِّنَةً لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

৩৫. আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি।



তাফসীর: সেই পাথরের চিহ্ন যা তাদের উপর বর্ষিত হয়েছিল, কালো দুর্গন্ধময় পানি, উল্টে দেওয়া বসতি এ সকল নিদর্শন ও শিক্ষণীয় বিষয়। যারা বুদ্ধিমান তাদের জন্য। কেননা, তারাই এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে পরিণাম ও প্রভাব লক্ষ্য করে। কিন্তু যারা জ্ঞান-বুদ্ধিহীন তাদের উক্ত বিষয়ের সাথে কোন সম্পর্ক থাকে না। তারা তো ঐ পশুর ন্যায় যাদেরকে যবেহ করার জন্য কসাই খানায় নিয়ে যাওয়া হয়, অথচ তাদের কোন অনুভূতিও থাকে না। এর মাধ্যমে মক্কার মুশরিকদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে যে, তারা যে মিথ্যাজ্ঞান ও অস্বীকার করার পথ অবলম্বন করেছে, তা একমাত্র জ্ঞান-বুদ্ধিহীন লোকেদের আচরণ।

লূত আ. সম্পর্কে আরো আয়াত-

সূরা ৭ আরাফ: ৮০-৮৩; সূরা ১১ হুদ: ৭৭-৮৩; সূরা ২৬ শু'আরা: ১৬০-১৭৩

বিষয়: বিবিধ

১১৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381268
১২ জানুয়ারি ২০১৭ বিকাল ০৪:২০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো আল্লাহ এই পৃথিবীতে বহু নিদর্ষন দিয়েছেন মানুষের শিক্ষার জন্য তার পরেও মানুষ শিক্ষা নেয়না। আপনাকে ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File