সূরা মা'আরিজের (১৯-৩৫ এর আয়াতের) সংক্ষিপ্ত তাফসীর ও কামিয়াবী নামাযীদের বৈশিষ্ট্য

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৯ মে, ২০১৬, ১২:৩৩:২৫ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا ﴿١٩﴾ إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا ﴿٢٠﴾ وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا

﴿٢١﴾ إِلَّا الْمُصَلِّينَ ﴿٢٢﴾ الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ ﴿٢٣﴾ وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ ﴿٢٤﴾ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ﴿٢٥﴾ وَالَّذِينَ يُصَدِّقُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ ﴿٢٦﴾ وَالَّذِينَ هُم مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ ﴿٢٧﴾ إِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَأْمُونٍ ﴿٢٨﴾ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ﴿٢٩﴾ إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ ﴿٣٠﴾ فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَـئِكَ هُمُ الْعَادُونَ ﴿٣١﴾ وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ ﴿٣٢﴾ وَالَّذِينَ هُم بِشَهَادَاتِهِمْ قَائِمُونَ ﴿٣٣﴾ وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ ﴿٣٤﴾ أُولَـئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُّكْرَمُونَ ﴿٣٥﴾

সহজ-সরল বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা



১৯: মানুষ তো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থিরচিত্তরূপে। (অর্থ্যাৎ তারা সৃষ্টিগতভাবেই দূর্বল, ভীরু, অসহিষ্ণু প্রকৃতির)

২০: যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে হা-হুতাশ করে। (বিপদে পড়লেই একেবারে ভেঙ্গে পড়ে, হা-হুতাশ করতে থাকে)

২১: আর যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে হয় অতি কৃপণ।(স্বচ্ছলতা লাভ করলে কৃপণ হয়ে যায়; আল্লাহর হকের কথাও ভুলে যায়। সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: মানুষের নিকৃষ্টতম জিনিস হলো কৃপণতা ও কাপুরুষতা)

২২: অবশ্য নামাযীগণ এর ব্যতিক্রম। (এখান থেকে আল্লাহ তা'আলা অস্থির প্রকৃতির বান্দাহদের থেকে তাদের পৃথক করছেন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দাহদের গুণাবলী বর্ণনা করছেন)

২৩: যারা তাদের নামাযে সদা নিষ্ঠাবান। (তারা নামাযের ব্যাপারে অবহেলা করে না। প্রতিটি নামাযকে তার সঠিক সময়ে বড়ই যত্নের সাথে আদায় করে। কোন ব্যস্ততা তাদেরকে নামায থেকে বিরত রাখতে পারে না এবং দুনিয়ার কোন স্বার্থ তাদেরকে নামায হতে উদাসীন করতে পারে না।)

২৪: আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে- (ওয়াজিব যাকাত ও নফল সাদাকা উভয়ই এর মধ্যে শামিল)

২৫: ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের।(বঞ্চিতের মধ্যে সে ব্যক্তিও শামিল যে রুযী হতে বঞ্চিত। আর সে ব্যক্তিও শামিল, যে আসমান ও যমীন থেকে আগত কোন বিপদে আক্রান্ত হওয়ার ফলে পুঁজি হতে বঞ্চিত (পুঁজিহারা, দেউলিয়া) হয়ে গেছে এবং সে ব্যক্তিও এর মধ্যে শামিল, যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও ভিক্ষা, যাচ্ঞা বা হাত পাতার অভ্যাস না থাকার কারণে মানুষের দান-সাদাকা থেকে বঞ্চিত থাকে।)

২৬: আর যারা কর্মফল দিবসকে সত্য বলে জানে। (যেদিন ভালো আমলের জন্য পুরষ্কৃত করা হবে আর মন্দ আমলের জন্য রয়েছে আযাব)

২৭: আর যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তি সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত। (অর্থাৎ, আনুগত্য এবং সৎকর্ম সম্পাদন করা সত্ত্বেও আল্লাহর মাহাত্ম্য এবং তাঁর প্রতাপের কারণে তারা তাঁর পাকড়াও-এর ভয়ে কম্পিত থাকে এবং বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর রহমত যদি আমাদের উপর না হয়, তাহলে আমাদের নেক আমলগুলো আমাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে না।)

২৮: নিশ্চয়ই তাদের প্রতিপালকের শাস্তি হতে নির্ভয় থাকা যায় না।(আল্লাহর আযাব থেকে কারো নির্ভয় হওয়া উচিত নয়, বরং সর্বদা সে আযাবকে ভয় করা এবং তা হতে মুক্তি লাভের সম্ভবপর উপায় ও পন্থা অবলম্বন করা উচিত।)

২৯: আর যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।( ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না)

৩০: তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।(অর্থাৎ, মানুষের যৌন-ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য দুটি বৈধ মাধ্যম রেখেছেন। একটি হল স্ত্রী। আর দ্বিতীয়টি হল অধিকারভুক্ত (যুদ্ধবন্দিনী অথবা ক্রীত)দাসী। বর্তমানে এই অধিকারভুক্ত দাসীর ব্যাপারটা ইসলামের নির্দেশিত কৌশল অনুসারে প্রায় শেষই হয়ে গেছে। তবে আইনগতভাবে এই প্রথাকে একেবারে এই জন্য উচ্ছেদ করা হয়নি যে, ভবিষ্যতে যদি এই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে অধিকারভুক্ত দাসী দ্বারা উপকৃত হওয়া যেতে পারে। মোট কথা ঈমানদারদের এটাও একটি গুণ যে, তাঁরা যৌন-ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য (উক্ত দুই মাধ্যম ছাড়া) কোন অবৈধ মাধ্যম অবলম্বন করে না।)

৩১: তবে কেউ এ ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালংঘনকারী

৩২: এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।(তাদের নিকট মানুষের যেসব আমানত থাকে, তাতে তারা খিয়ানত করে না। আর লোকদের সাথে যে অঙ্গীকার করে, তা ভঙ্গ করে না, বরং তা পালন ও পূরণ করে।)

৩৩: আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে অটল।(তারা (কোন স্বার্থে) সাক্ষ্য গোপনও করে না এবং তাতে কোন পরিবর্তনও করে না। যদিও আপনলোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়)

৩৪: এবং নিজেদের নামাযে যত্নবান--(সঠিক সময়ে ওয়াজিব, মুস্তাহাব পূর্ণভাবে বজায় রেখে সালাত আদায় করে)

৩৫: তারা সম্মানিত হবে জান্নাতে। (উপরে বর্ণিত গুণাবলী হলো জান্নাতবাসীদের। বিষয়টি সূরা মুমিনুনেও কিছুটা এরূপ বর্ণিত হয়েছে।)

এখানে লক্ষণীয় যে, জান্নাতী মুমিনের গুণাবলীর প্রথম নিদর্শন ছিল সালাতের ব্যাপারে এবং শেষও করেছেন সালাত দিয়ে। এর মানে হলো- দ্বীনের কার্যসমূহের মাঝে সালাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।

সম্মানিত নামাযীর বৈশিষ্ট্য:

সুতরাং আমরা জানতে পারলাম, জান্নাতের সম্মানিত লোকদের গুণ হলো- তারা হবে নামাযী। নামাযীর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

১. নামাযের/সালাতের প্রতি নিষ্ঠাবান। সার্বক্ষণিক নামাযে কায়েম থাকে

২. যাকাত ও নফল সাদাকা আদায় করে।

৩. কর্মফল দিবসকে সত্যয়ন করে।

৪. প্রতিপালকের শাস্তিকে ভয় করে।

৫. যৌনাঙ্গকে হেফাযত রাখে যাবতীয় অবৈধ পন্থা থেকে।

৬. আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে।

৭. সাক্ষ্যদানে প্রতিষ্ঠিত/অটল থাকে।

৮. নামাযে/সালাতে যত্নবান। ( সঠিক সময়ে ও পূর্ণ নিয়মে সালাত আদায় কারী)।

লক্ষণীয়: সূরা ২৩ মুমিনুনে জান্নাতের উত্তরাধিকারীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে ৭ টি গুণ বর্ণিত হয়েছে যেখানে ৩ এবং ৪ নং নেই এর পরিবর্তে আছে " যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে।(২৩:৩)

(সূরা ৭০ মা'আরিজ: ২২-৩৫; সূরা ২৩ মুমিনুন: ২-১০)

অকল্যাণপ্রাপ্ত বা মন্দ নামাযীর বৈশিষ্ট্য হলো-

১.যারা তাদের নামাযে অমনোযোগী।(যারা যথা সময়ে সালাত করে না এবং যারা সালাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে রূকনগুলো ঠিকমত আদায় করে না।)

২.যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।

৩.গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছোটখাট সাহায্য দানে বিরত থাকে।

(দ্রষ্টব্য: সূরা ১০৭ আল মাউন: ৪-৭)

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369531
১৯ মে ২০১৬ রাত ০১:৩৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
369537
১৯ মে ২০১৬ রাত ০২:৩০
শেখের পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File