ঈমানের বিষয়বস্তু ও স্বরূপ

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩৫:৫৫ রাত

ঈমানের বিষয়বস্তু ও স্বরূপ ( সত্যের সন্ধানে ৩য় পর্ব)

(১) আল্লাহর প্রতি ঈমান: এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর উপর বিশ্বাসের স্বরূপ হচ্ছে, তার সত্তায়, তার গুণাবলী ও তার কার্যে কাউকে অংশীদার বানানো যাবে না। উপাসনার যোগ্য একমাত্র তিনি। তাকে ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা করা, মাথা নত করা যাবে না।

তার আকৃতি,গঠন, অবস্থান ও তার গুণাবলী কুরআন ও হাদীসে যেভাবে এসেছে সেইভাবেই গ্রহণ করতে হবে, মনগড়া ব্যখ্যা করা যাবে না এবং কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনা করা যাবে না। তার গুণাবলীতে বিশ্বাস রাখতে হবে, কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

( দ্রষ্টব্য: সূরা শূরা: ১১, সূরা নাহল: ৭৪, সূরা যুমার: ৩, সূরা বাকারা: ২৫৫-২৫৮/২৮৫, সূরা আলে ইমরান: ২৬-২৭, সূরা আন নিসা: ৭৮, সূরা আনআম: ১৭-১৮/৩৫-৩৯/১২৫)

(২) ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান: ফেরেশতারা আল্লাহর বিশেষ এক সৃষ্টি, যারা সব সময় আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যস্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশেষ দায়িত্বে রয়েছেন। ( দ্রষ্টব্য: সূরা আম্বিয়া: ২৬-২৮)

(৩) আসমানী কিতাবে ঈমান: আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং হেদায়েত স্বরূপ তাদের ঐশীবাণী বা কিতাব দিয়েছেন। এর মধ্যে চারটি কিতাব বড় ( তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, কুরআন)। সবশেষ আসমানী কিতাবের নাম আল কুরআন। আমরা এসব কিতাবের উপর ঈমান আনবো আর সর্বশেষ কিতাব তথা আলকুরআনকে অনুসরণ করবো।

(দেখুন- সূরা আলে ইমরান: ৪৪, নিসা: ৮২, সূরা হুদ: ১৪.৪৯)

(৪) নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান: নবী-রাসূলদের উপর ঈমানের স্বরূপ হচ্ছে, তাদের আমরা জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ (আল্লাহর মনোনীত বান্দাহ) হিসেবে জানবো এবং সর্বশেষ রাসূলের বিধানকে (ইসলাম) অনুসরণ করবো।

(দষ্টব্য: সূরা আলে ইমরান: ১৯, ৩১-৩২ সূরা আননিসা:; ৫৯-৬৫, সূরা আহযাব: ৭১)

(৫) ভাগ্যের প্রতি ঈমান: তাকদীর বা ভাগ্যের প্রতি ঈমানের স্বরূপ হচ্ছে, যা ছিল, যা হচ্ছে, যা হবে (অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত) সবই আল্লাহর জ্ঞানের ভিতর ও তারই নিয়ন্ত্রণে। তার অগোচরে কিছুই নেই। সবকিছুর উপর আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তার জ্ঞান সবকিছুতে ব্যাপ্ত। সকল সৃষ্টির কর্মাবলী তার নিয়ন্ত্রণে এবং তা এক সুরক্ষিত ফলকে লিখিত আছে। ( সূরা হাজ্জ: ৭০, সূরা কাফ: ৪, সূরা ইয়াসিন: ৮২)

* মানুষের ভালো-মন্দের কর্মের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা, কিন্তু তিনি মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন যে কোনোকে বেছে নিতে। কারণ তিনি পরীক্ষার জন্যই আমাদের প্রেরণ করেছেন।

(৬) পরকালের প্রতি ঈমান: পরকালের প্রতি ঈমানের স্বরূপ হচ্ছে, মৃত্যুর পর সকল কার্যাবলীতে বিশ্বাস করা(যা কুরআন ও হাদীসে বণূিত হয়েছে)। যেমন:- কবরের পরীক্ষা, আযাব বা শান্তি,কিয়ামত, হাশর, মিযান তথা বিচারকার্য, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, আল্লাহর দীদার ইত্যাদি।

কালেমায়ে শাহাদাত: মুমিনের স্বরূপ: কালেমার প্রথমাংশ হচ্ছে- উপাস্য হিসেবে শুধু আল্লাহকে মানা, সর্ব প্রকার শিরক থেকে মুক্ত থাকা। তার কোনো সৃষ্টিজীবকে উপাস্য তো দুরে থাক উপাস্যের মাধ্যম হিসেবেও গ্রহণ করা যাবে না।

দ্বিতীয় অংশের স্বরূপ হচ্ছে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্দাহ ও সর্বশেষ রাসূল। (আদর্শ -অনুসরণের একমাত্র যোগ্য)

(দ্রষ্টব্য: সূরা আহযাব: ৪০, সূরা আ'রাফ: ১৫৮)

কিছু ভ্রান্ত আকীদা বা ধারণা:

(১) আল্লাহ নিরাকার: এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আল্লাহ তাআলা তুলনাহীন সাকার। তার জন্য কোনো উপমা নেই সৃষ্টির সাথে। (দেখুন: সূরা শূরা: ১১

(২) সর্বত্র বিরাজমান: "আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান বা সবকিছুতে আল্লাহর অস্তিত্ব" এসব ভ্রান্ত আকীদা। তিনি আরশের উপর সমাসীন এবং তার জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র। কোনো কিছুই তার আয়ত্বের বাইরে নয়।

(৩ আল্লাহর রাসূল (স.) গায়েবের খবর জানেন: রাসূলুল্লাহ স. গায়েবের খবর জানেন না, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানেন না। রাসূল তাই জানেন যতটুকু আল্লাহ তাআলা তাকে জানিয়েছেন। (দ্রষ্টব্য: সূরা আ'রাফ:১৮৮)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান, বুঝতে সাহায্য করুন।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284017
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২১
আফরা লিখেছেন : অনেক ভাল আর শিক্ষনীয় পোষ্ট প্রিয়তে নিয়ে নিলাম ।

অনেক অনেক জাজাকাল্লাহ ।


আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান, বুঝতে সাহায্য করুন। আমীন ।
284061
১৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File