প্রথম আলোর জোচ্চুরিই গল্পটির জন্ম দিয়েছে।

লিখেছেন লিখেছেন রাহমান বিপ্লব ১৬ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:৩০:১৬ বিকাল

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সাথে স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর সরাসরি স্বশস্ত্র যুদ্ধের খবরটিকেও আজ বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে প্রথম আলো!



ফেসবুকে মেমোরি সুবিধার মাধ্যমে নোটিস পেলাম যে, সেখানে একটি গল্প পোস্ট করেছিলাম গত বছর এই দিনে! কাকতালীয় ভাবে গল্পটি ছিলো ঠিক এই ধরনের বিকৃত নিউজ দাতাদের নিয়েই!

পড়লে বুঝতে পারবেন, কিভাবে কতিপয় পত্রিকাগুলো অপসাংবাদিকতা চর্চার পাশাপাশি অপসাংবাদিক দের জন্ম দেয়!

গল্পটির নাম -

‘আমি সাংবাদিক’

এদের বসত-বাটিতে সরেজমীনে এলে আমার বমি আসে। এমনিই দরিদ্রতার প্রান্তে লাগালাগি জীবন যাপন, ‘উপরন্তু’ গুচ্ছগ্রাম গুলো এত নোংরা! শব্দটিতেই যেন অরুচি!

আজ এখানে শত শত বাঙালি যুবকের ঢল লাঠি হাতে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। চোখেমুখে সে কী দুঃশ্চিন্তার ছাপ! তদ্রুপ ‘নিশ্চিত মৃত্যুর’ মুখে এদের গলা ছেড়ে হাঁকডাক ও নিজেদের জোটবদ্ধতা রক্ষার ব্যার্থ চেষ্টা বাড়তি কৌতুকের সৃষ্টি করেছে।

এই এলাকাটি বাঙালি গুচ্ছগ্রাম হলেও তারা যে একমুহুর্তও নিরাপদ নয়, তা স্পষ্ট। আধুনিক এই সমরাস্ত্রের নৈমিত্যিক ভীতির বিপরীতে বাঁশের এই লাঠি!

রাঙ্গামাটি শহরে আবাস হলেও ইদানিং ঘটা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য আজ আবার গহীন বাঙালিপাড়া পর্যন্ত আসতে হল। ঢাকা থেকে কেন্দ্রের নির্দেশ- ‘সরেজমিন রিপোর্ট চাই’। ভালো এডিটিং পেতে হলে স্থানীয় ছেলেটার ভরসা কৈ? ‘ষ্টোরির নৈপুন্য ঠিক রেখে সত্য অক্ষর বদলে মিথ্যা অক্ষর বসানো কঠিন কাজ হলেও, মিথ্যাকে সত্যে ফিরিয়ে আনার একটি অদ্ভূত নেশা ইদানিং আমার ভেতর চেপে বসেছে’।

প্রত্যেকটা গায়ে ছেড়া কাপড় আর নোংরা এই পরিবেশে, একটা হাত বয়ে এতক্ষন পরে একটি চেয়ার এলো। নাক শিটকাতেই, স্বতোৎসাহে নিজের পরনের কাপড়েই আবার মুছতে থাকলো ছোড়াটা। এ পাড়ায় আমার সংবাদ সগ্রহও প্রায় সমাপ্ত! এদের যে ভীতি আর ততোধিক চিৎকার দেখলাম তাতে আজ নিউজটা হবে ঢাকায় অপেক্ষমান আমার সম্পাদকের জন্য অত্যন্ত সুখপাঠ্য।

বাঙালি পাড়ায় এলে একটা বিষয় খুব উপভোগ করি। কলম দিয়ে কী লিখছি এরা একরদ্দিটুও পড়তেও অপারগ, তবুও সেকী যে অন্ধবিশ্বাস এ ‘বাঙালি বাংবাদিকের’ ওপর, আর তাতেই একটা বিনয় মাখা শ্রদ্ধার পরিবেশ তৈরী করে নেয়! যেন এরা ধরেই নিয়েছে ‘মনের কথাগুলো’ এবার বাঙালি সাংবাদিকের কারনেই ঢাকা অবধি পৌছে যাবেই যাবে। ব্যাপক আতংকের মাঝেও তাই বাঙালি সাংবাদিকের জন্য তাদেরই কতিপয় যুবক একেকটা জীবন্ত ঢাল হতে চাইছে। আচরনে বুঝাতে চাচ্ছে জীবন দেবে, তবু ছুটে আসা সশস্ত্র উপজাতির একটা টোকাও এই শ্রদ্ধেয়র গায়ে পড়বে না!

আজ বাঙালিদের ওপর কোন আক্রমনই হবেনা। সুনিশ্চিত না হলে আমার এখানে আসাও লাগতো না! আজকে আমার কাজ হল ‘আগামী কালের’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সশস্ত্র আক্রমণের পূর্বেই লাগসই প্রেক্ষাপট রচনা করে দেয়া। ... সংবাদপত্র একটি সাংঘাতিক শক্তি! অভূতপূর্ব ক্ষমতা তার! আর, আমার মত, একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রে কর্মরত একজন গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি সাংবাদিক; এককথায়- ‘সবই করতে সক্ষম’।

ইদানিং বাসায় ফিরেই পুনরায় লিখতে বসি। লিখি আর লিখি। ‘সত্য প্রসূত মিথ্যা’ সংবাদেরই ‘দর্পণ প্রতিচ্ছবি’ যখন অন্য একটি পাতায় উঠে আসে, তখন কেমন যে লাগে, বলে বোঝাতে পারবনা। দীর্ঘসময় রুদ্ধপিঞ্জরে বন্দি স্বাধীনজন্মা পাখির মত গোটা গোটা অক্ষরে সত্যগুলো যখন প্রতিষ্ঠিত ‘মিডিয়ার কাছে’ পরাজিত হয়ে শিশুর মত গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করতে করতে অস্থির হয়ে যায়, নিজেকে তখন ‘ভী ষ ন’, ভীষন শক্তিমান সাংবাদিক বলে মনে হয়...

আত্মচিন্তার মাঝে, এক মুরুব্বি এসে বললেন, ‘বাবা আমরা গরীব মানুষ, সামান্য মুরগির ঝোল আর দুইটা ভাত যদি খেতেন খুব খুশি হইতাম’- শুনে নানামূখি অনুভূতির আক্রমনে কী যে হল, শুরু থেকে দমিয়ে রাথা বমন হঠাৎ করেই ‘ওয়াক’ করে বেরিয়ে এলো! উপলব্ধি হল- একটা বাঙালি সাংবাদিকের ওপর বিশ্বাস রেখে এ বেচারা বাঙাল তার স্ত্রীর স্বযত্নেপালা মুরগিটাও উৎসর্গ করেছে অথচ হারামজাদা জানেই না আজ কী সংবাদ হতে যাচ্ছে তাদের নিয়ে! এইতো তারই সামনে! পৃষ্ঠাজুড়ে গোটা গোটা অক্ষরে তারই সামনে রয়েছে সে রিপোর্ট! আর কাল...

তৎক্ষণাৎ এই তীব্র কাউন্টার চিন্তা ভয়ংকর হয়ে অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিতে পারতো। ছোটবেলার স্মৃতীগুলো একে একে মনে পড়তে চাইলো। বাবা ছিলেন খুব গরিব। তাঁর রক্তের টাকায় আর মায়ের পালা মুরগি বেঁচা টাকা নিয়ে প্রায়ই হোস্টেলে ফিরে আসতাম, আজ আমি ‘মানুষ’! গাড়ি হাঁকিয়ে চলছি, কত উন্নত খাদ্য আজ সহজেই গলা দিয়ে নেমে যায়। কত দেশি-বিদেশি সুপ্রতিষ্ঠিত ‘দালালেরা’ আজ আমার নিত্য খোজ রাখে-ইয়ত্যা নেই। আসলে সেই কড়া মেজাজি গরিব বাবার মৃত্যুর পরপর শোকস্থব্ধ শয্যাশায়ী মায়ের মৃত্যুই এ সুযোগ আমার জন্য তৈরী করেছিলো, সন্দেহ নেই।

আরো কিছু এলাকা এদের দলের সাথে ঘুরে ঘুরে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলে নোংরা-তুচ্ছ খাদ্য এড়িয়ে বাসায় চলে এলাম.........

আমার কাছে, আজকের লেখা এ ‘মিথ্যার দর্পণ-ছবি’ সত্যিই যেন কেমন! মিথ্যারা আমায় সম্মান দিয়েছে, দিয়েছে যোগ্যতার স্বীকৃতি আর মিডিয়ার শক্তি! তবে কেন রেওয়াজ ভেঙে কান্নামূখী নির্লিপ্তরা আজ প্রতিবাদী হতে চাইছে?! এ আমার লেখা হতে পারেনা! কিছুতেই না! আমার লেখা আমার বিরোধীতা করতে পারেনা, অস্থিরতার আবহে পেগের পর পেগ যাচ্ছে গলা বেয়ে, মস্তিস্কের গ্রথিতে গ্রন্থিতে মারছে ছোবল, আমায় ছেড়েদে আমায় হত্যা করিস না ‘আমার লেখা!’ ‘আমার সন্তান’, আমায় মেরে ফেলিস না! সত্যরুপ ফিরে পেয়ে আজ হঠাৎ কেন এই হুমকির পর হুমকি, কোনদিন তারা বালিশের নিচ থেকে ছড়িয়ে যাবে মিডিয়া থেকে মিডিয়ায়! সেদিন দেশব্যাপী এই পিতারই বিরুদ্ধে মিছিল দেখাবে এরাই, উঠবে ‘দালাল’ ‘দালাল’ রব...আমার আজকের পৃষ্ঠপোষকদেরই মুখে!

অবশ মস্তিষ্ক অবশ লালিত চেতন! অবচেতন বলে বেড়াচ্ছে,

নিজের পরিচয়ে তুমি গর্বত হবেনা?!

অদ্ভূত আমি, কেন যেন বলেছি- হ্যাঁ...

-তোমার কী কোন ইচ্ছা আছে?

সেদিনই যেন মরে যাই!

-কেন মরতে চাও?

ঐ যে বাবা বেত হাতে নিয়েছে! তাঁর ক্রুব্ধ শাসন বিহীন স্বর্গচিন্তা যে আমার জন্য নিষিদ্ধই রয়ে যাবে... মা ওমা!! তুমি যেন এবারো বাবার সামনে আড়াল হয়ে বাধা দিওনা! তোমার ছেলে মানুষ হতে পারেনি, মা! গরীব বাবার আদর্শকে হত্যাকারী ছেলেটি আজ নিজ সন্তানের কাছে নিহত হয়েছে, তুমি গর্বিত হও তোমার নাতিরা বড় ভালো, মা! বড় সংগ্রামী, ঠিক তোমার স্বামীর মত হয়েছে, মা! বাবাকে আসতে দাও, বাবারা যে সন্তানদের হত্যা করেননা, হত্যা করেন সন্তানের মাঝে বাস করা অমানুষটাকে, এখনো তুমি বোঝনা?... আজ আমায় অমানুষত্ব হতে উদ্ধার কর, অনেক কষ্টে যে তোমাদের কাছে এসেছি, আমায় জীবন দাও, একনদী সারল্য দাও, একদন্ড শান্তি দাও,দাও নীতি... দাও দাও... আমার মা আমার বাবা !

-তবে তাই হোক?

‘তাই হোক’

রাহমান বিপ্লব

১২-৭-২০১৪

বিষয়: বিবিধ

১২৪২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

336217
১৬ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হাম্বাদিক!!!
আদিবাসি না উপজাতিয় সন্ত্রাসি এটা লিখতে পারেনা আলু!
336263
১৬ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:২৫
মোহাম্মদ কাশেম মরিচ্যা লিখেছেন : এই মুহূর্তে প্রথম আলো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার দাবি জানাই।
336280
১৬ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:৪৬
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : দৈনিক পচা আলু দেশ ও ধর্ম বিদ্বেষী। বন্ধ করা হোক! ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File