অনেকেই মনে করেন হজের নিয়মকানুন ঠিকঠাক আদায় করলেই হজ হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। প্রত্যেক কাজেরই নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন আছে, সাথে হাকিকত বা ইনার স্পিরিটও আছে।
উদাহরণত, আপনি যখন মিকাতে পৌঁছান, তখন পোশাক খুলে এহরাম পরেন। এহরাম কী? সাদা রঙের সেলাইবিহীন দুটো কাপড়ের টুকরা, সোজা কথায় এক ধরনের চাদর। তো নিচে এক চাদর বাঁধি আর উপরে আরেকটা। এটা সাদাসিধে জীবনের আলামত।
আপনি এহরাম বাঁধার মধ্য দিয়ে এই ওয়াদা করেন যে, সারাটা জীবন এমন সাদামাটাভাবে কাটাবেন। যেমন হাদিসে আছে: আল বাযাযাতু মিনাল ঈমান। সাদামাটা থাকা ঈমানের অংশ। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ৫৮)
হাদিসে উল্লিখিত বাযাযা শব্দের অর্থ সাদামাটা। তো এহরাম বাঁধার মানে সাদামাটা হওয়ার প্রশিক্ষণ। আপনি যখন দামি-দামি কাপড় রেখে একদম সাদামাটা দুই টুকরা কাপড়ে শরীরে জড়িয়ে নিয়েছেন, এর মানে আল্লাহকে এই কথা বলছেন : ইয়া আল্লাহ, আমি এমন সাদামাটাভাবে জীবনযাপন করব।
আজকাল মানুষ কাপড়ের পেছনে অনেক টাকা-পয়সা নষ্ট করে, শপিংয়ে গিয়ে দেদারসে পয়সা উড়ায়, এবং মানুষকে দেখানোর জন্য অসংখ্য টাকা খরচ করে। ‘সাদামাটাভাবে জীবনের’ মানে এই ধরনের কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার ওয়াদা।
এহরাম মানে এই ওয়াদা যে, আপনি আপনার টাকা-পয়সা ও সময়ের অপচয় করবেন না। এহরাম কেবল হজের একটা রীতি নয়— পরলাম আর খুলে ফেললাম। বরং এর শিক্ষা সারা জীবনের জন্য।
তারপর আপনারা তওয়াফ করেন। এটা অর্থহীন কোনো প্রথা না, একদমই না, বরং এটা এক ধরনের ওয়াদা, এক কিসিমের প্রতিশ্রুতি।
কীসের প্রতিশ্রুতি? আমার জীবন আল্লাহর চারপাশে ঘুরবে। এই বিষয়টি আল্লাহর রসুলের (স.) বলা সেই হাদিসের মতো, যেখানে তিনি বলেন, ‘মুমিনের উদাহরণ খুঁটিতে বাঁধা ঘোড়ার মতো।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ১১৩৩৫)
কল্পনা করুন—একটি খুঁটি, তাতে রশি লাগানো, আর তার সাথে ঘোড়া বাঁধা। ওই রশি যদি পাঁচ হাত লম্বা হয়, তাহলে ঘোড়াটা ওই পাঁচ হাতের মধ্যেই চক্কর খাবে। এর বাইরে যেতে পারবে না।
তো হাজি সাহেব যখন কা'বা তওয়াফ করেন, তখন এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, আমার জীবন আল্লাহর চারপাশে ঘুরবে। এভাবেই আমি নিজেকে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করব। আল্লাহর জন্য আমার সময় ব্যয় করব। তার হুকুম আদায় করব।
সারা জীবন তার বেঁধে দেওয়া সীমানাতেই ঘুরব, এর বাইরে যাব না। যদিও কোনো সত্যিকারের রশিতে আমি আটকা নই, তারপরেও নিজেকে নিয়মতান্ত্রিকতা আর আত্মনিয়ন্ত্রণের রশিতে বেঁধে রাখব।
তওয়াফ আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেয়। এভাবে হজের প্রত্যেকটি নিয়মের গভীর অর্থ আছে। আমাদের সেসব জানতে ও বুঝতে হবে। এবং সঠিক স্পিরিট নিয়ে এবাদত করতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন