প্রকৃতিতে জেকে বসেছে কনকনে ঠাণ্ডা। ধোঁয়াটে কুয়াশায় দেখা মিলছে না সূর্যের। এমন পরিস্থিতিতে শুধু মানুষই নয়, পাখিরাও পাচ্ছে কষ্ট।
দুই দিন ধরে দেশে বিভিন্ন জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গত বুধবার ভোরে একপশলা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই শৈত্যপ্রবাহের শুরু।
গতকাল কোনো কোনো জেলায় সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। ফলে গ্রামীণ জনজীবন অনেকটা থমকে গেছে। মানুষের পাশাপাশি শীতে কমে গেছে পাখিদের চঞ্চলতা, ওড়াওড়ি। ঠাণ্ডায় মারা যাচ্ছে অনেক পাখি।
গতকাল কিশোরগঞ্জের বেশ কয়েকটি পাখির বিচরণক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে পাখিদের চঞ্চলতার পরিবর্তে তাদেরকে জড়োসড়ো হয়ে থাকতে দেখা যায়।
বছরের অন্যান্য সময় যেখানে পাখিদের এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়তে, খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত থাকতে কিংবা একে অপরের সাথে খুনসুটি ও কলকাকলিতে মুখর থাকতে দেখা যায়, এর বদলে এবার শীতে পাখিদের ঝিম মেরে বসে থাকতে দেখা গেছে।
শীতের ফলে দোয়েল, বুলবুলি, শালিক, কাঠঠোকরা, চড়ুই ও কাকদের একা একা, চুপচাপ বা দলবদ্ধ হয়ে শরীরের পালক ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।
জলাভূমির পাখি বিশেষত পরিযায়ী পাখিগুলোকে শীত কাবু করতে পারেনি বলেই মনে হয়েছে। গত বুধবার সকালে করিমগঞ্জের খয়রত গ্রামের জঙ্গলে বেশ কয়েকটি পাখিকে গাছের নিচে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছিল দোয়েল এবং মালকোহা বা বন কোকিল। মুক্ত আকাশে বিচরণ করা বন্য পাখিদের পাশাপাশি গৃহপালিত পাখির অবস্থাও প্রায় একই রকম।
এই শীতে জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে হাঁস-মুরগিও মারা যাচ্ছে, এমন খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের তরুণ বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও পাখি পর্যবেক্ষক জহির মাহমুদ সোহাগ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘অন্য ঋতুর চেয়ে শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পাখি মারা যায়। শীতজনিত রোগেই মূলত মারা যায় তারা।’
শীতে পাখিদের জীবন-প্রণালির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীতে পাখি পালক ফুলিয়ে রাখে নিজের শরীর গরম রাখার জন্য। এই পালক ফুলিয়ে রাখাটা পাখিদের শীত নিবারণের প্রকৃতিপ্রদত্ত একটি ক্ষমতা। পালক ফুলিয়ে রাখলে পাখিদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। ফলে শীতে কিছুটা গরম অনুভূত হয়।
কিশোরগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন ডক্টর নজরুল ইসলাম বলেন, শীতে বন্য পাখি ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। বিশেষ করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। বন্য পাখির যেহেতু গৃহপালিত পাখির মতো চিকিৎসা বা টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেই, আশঙ্কা তাই তাদেরকে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাতে বেশি বেশি গাছ লাগানো উচিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন