টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় ৬৭ গ্রাম তলিয়ে গেছে। একই কারণে পানি উঠেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌরশহরসহ শতাধিক বাড়িঘরে। এদিকে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। বিলীন হয়ে কাশিমবাজার গ্রামের গেছে ৫০টি ঘর। সরকারি কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঝিনাইগাতী : টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সদর, হাতিবান্ধা ও ধানশাইল ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সিরাজুস সালেহীন বলেন, প্রাথমিক হিসাবে ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৫ হেক্টর জমির ৭৫টি পুকুরের ৯ দশমিক ২ টন মাছ ও ১০ লাখ পোনা ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলমান আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করতে বলা হয়েছে।
হালুয়াঘাট : নদী দখল মুক্ত না করায় কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এত বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। পৌর শহরের সেন্টমেরিজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভুঞা পৌর শহরের পানিবন্দি মানুষের খোঁজ নিতে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
নালিতাবড়ী (শেরপুর) : নালিতাবাড়ীতে গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভোগাই নদের পাঁচটি অংশে বাঁধ ভেঙে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২২ গ্রামের মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি ও পুকুরের মাছ। অতিবৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। এসব প্লাবিত অঞ্চল গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) পরিদর্শন করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু ও ইউএনও হেলেনা পারভীন।
জেলা প্রশাসক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে দ্রুত এ বাঁধ নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলগাজী (ফেনী) : টানা বর্ষণে ও উজানের ঢলে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থান ভেঙে গেছে। জয়পুর ও দৌলতপুর এলাকায় এ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দুপুরে সদর ইউনিয়ন উত্তর দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি ভাঙন দেখা দেয়। এতে তলিয়ে যায় আশপাশের গ্রামাঞ্চল, মাছের ঘের, আমন ধানের বীজতলাসহ অসংখ্য বাড়িঘর। বিকাল ৩টায় সদর ইউনিয়ন জয়পুর গ্রামের আবদুল মমিনের বাড়ির পাশ দিয়ে বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরী নদীর পানি। পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে বাঁধের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাইবান্ধা: অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। বিলীন হয়ে কাশিমবাজার গ্রামের গেছে ৫০টি ঘর। জেলার অন্তত তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের কৃষকরা তোষাপাট কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। মাঝি-মাল্লারা নৌকা মেরামত এবং পরিচর্যা শুরু করেছে।
বেলকা চরের আব্দুর রউফ মিয়া জানান, যে হারে অবিরাম বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। তাতে করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আগাম বন্যা দেখা দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তার এক বিঘা তোষাপাট ক্ষেতে চার দিনের ব্যবধানে হাটু পানি জমে গেছে। সে কারণে তোষাপাট কাটতে হচ্ছে।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, চলমান বৃষ্টি আগাম বন্যার লক্ষণ। ইতিমধ্যে তিস্তার শাখা নদী সমুহ পানিতে ভরে গেছে। নিচু এলাকায় পানি জমে গেছে। উজানের পানি গড়ে এলে আরও পানি বৃদ্ধি পাবে। চারদিনের ব্যবধানে কাশিমবাজার গ্রামে ৫০টি পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানদের নিয়ে আগাম বন্যার প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। এজন্য বরাদ্দও প্রস্তুত রয়েছে।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন