গবেষণায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও নির্বাচন এবং সরকারকে নিয়ে ভিত্তিহীন তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রেবেকা সুলতানার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে গবেষণা জালিয়াতিরও অভিযোগ আছে।
দুই বছর আগে ওঠা এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলেও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন ওই শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। এ অবস্থায় আগামী ১০ দিনের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি। উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলামে স্বাক্ষরে ২৮ এপ্রিল দেওয়া এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দর্শন বিভাগের শিক্ষক রেবেকা সুলতানার পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রদর্শনে গণতন্ত্রের অবস্থান এবং বাংলাদেশে এর প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক গবেষণার ১৬৩ নম্বর পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুকে ‘কর্তৃত্ববাদী’ বলা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গবেষণার প্রথম অধ্যায়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত শিবনারায়ন রায়ের ‘গণতন্ত্র, সংস্কৃতি ও অবক্ষয়’ প্রবন্ধের অংশ বিশেষ তথ্যের উৎস উল্লেখ না করে রেবেকা সুলতানা নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন।
২১ নম্বর পৃষ্ঠায় অনাদিকুমার মহাপত্রের ‘আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ গ্রন্থ থেকে, ৫ম অধ্যায়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বর্ণনা করতে গিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলাদেশ জ্ঞানকোষ এবং এসএম আনোয়ারা বেগম ও হারুন রশীদের প্রবন্ধ থেকে তথ্য চুরি করা হয়েছে। এছাড়া গবেষণার ষষ্ঠ অধ্যায়টি গবেষণা প্রকাশের আগেই ঢাবির জার্নাল অব সোশিওলজিতে হুবহু প্রকাশ করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে।
ওই লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, রেবেকা সুলতানা তার গবেষণার ৫ম অধ্যায়ে ৩০ শতাংশ এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে ৫৩ শতাংশ তথ্য চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। থিসিসটি মৌলিকতাহীন অভিযোগ করে এ বিষয়ে তদন্ত করার দাবি জানানো হয়।
এসব অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি সেসবের সত্যতা পেয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি ৩ এপ্রিল নিশ্চিত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার। পরে গত বছরের ৩০ মে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য উপ-উপাচার্যকে (শিক্ষা) প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও করা হয়।
একই দিন গবেষণা ও প্রকাশনায় স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘দ্য রুলস ফর দ্য প্রিভেনশন অব প্লেইজারিজম’ শীর্ষক একটি নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। এই নীতিমালায় গবেষণায় চৌর্যবৃত্তিতে জরিমানা, ডিগ্রি বাতিল ও পদাবনতি, এমনকি চাকরিচ্যুতির মতো গুরুতর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এদিকে ১১ মাস অতিক্রম হলেও সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট পাঠানোর তাগাদা দিয়েছে।
গবেষণায় চুরি ও জাতির পিতাকে হেয় করার বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন ১১ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি কেন- জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির এক শিক্ষক বলেন, এটি দুঃখজনক। আরেক শিক্ষক বলেন, যেখানে একজন ছাত্র নকল করলে চিরজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হন। সেখানে একজন শিক্ষকের গবেষণা চুরির শাস্তি দিতে কালক্ষেপণ অনাকাঙ্ক্ষিত। এসব শিক্ষক যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন তবে তিনি কী শেখাবেন, ছাত্ররা ভাববে যে তাদের শিক্ষক চোর।
এ বিষয়ে জানতে উপ-উপাচার্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের সঙ্গে মূঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন এই বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন