হালকা, মাঝারি বা ভয়াবহ আকারে যদি করোনায় আক্রান্ত হন কেউ, তাহলে একই রকমভাবে ব্রেনের ক্ষতি হতে পারে। গবেষণায় এমন প্রমাণ দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর জেসিকা বার্নার্ড অনলাইন সায়েন্স এলার্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, কমপক্ষে দেড় বছর ধরে চলছে করোনা মহামারি। এ সময়ে মানুষের শরীর ও ব্রেনে কোভিড-১৯ কি প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে গবেষকদের গবেষণা চলছে অব্যাহতভাবে। তারা নতুন নতুন গবেষণা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে এ সম্পর্কে তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছেন। এসব গবেষণা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে করোনার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে। এতে বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস জীববিজ্ঞানের প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্নিহিত হতে পারে।
অর্থাৎ একজন মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে থেকে যেতে পারে এই ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব।
তিনি লিখেছেন, একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমার অতীতের গবেষণায় দৃষ্টি দিয়েছিলাম মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্রেনের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো বুঝতে। তাতে মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে তার চিন্তা করার সক্ষমতা ও চলাচলের সক্ষমতা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে মধ্য বয়স এবং তারও পরে- তার দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলাম।
কিন্তু এখন নতুন নতুন সব তথ্যপ্রমাণ সামনে আসছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত তার শরীর এবং ব্রেনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এই ভাইরাস। আমার গবেষক দল কিভাবে মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক উপায়ে এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায় তা অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন এমন মানুষদের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। তাতে মানুষের ব্রেনে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তার একটি প্রাথমিক, তবে বিস্তৃত গবেষণা ¯œায়ুবিজ্ঞান সম্প্রদায়ের বিরাট মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় ২০২১ সালের আগস্টে। ওই গবেষণায় গবেষকরা নির্ভর করেন ইউকে বায়োব্যাংক-এর বিদ্যমান ডাটাবেজের ওপর। এতে ২০১৪ সালে বৃটেনে কমপক্ষে ৪৫ হাজার মানুষের ব্রেনের ছবিভিত্তিক ডাটা রয়েছে। এসব ডাটাবেজ ছিল করোনা মহামারি শুরুর আগের সময়কার। গবেষকরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ করলেন। এরপর ওই সব মানুষের ব্রেন স্ক্যানের ডাটা সামনে আনলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই গ্রুপটির ব্রেন স্ক্যানের ডাটার সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হননি এমন মানুষদের ডাটার তুলনা করলেন। এক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ, পরীক্ষার তারিখ, কোথায় ডাটা গ্রহণ করা হয়েছে তার সঙ্গে তুলনামূলক চিত্র আঁকার চেষ্টা করলেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন স্বাস্থ্যগত বিভিন্নতা, আর্থ সামাজিক অবস্থাও তুলনায় নেয়া হলো।
গবেষকরা দেখতে পেলেন ব্রেনের গ্রে ম্যাটারে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা। এই গ্রে ম্যাটার নিউরনের কোষ দিয়ে তৈরি। তা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে কাজ করে ব্রেনে। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের গ্রে ম্যাটারের সামনের অংশ ও অস্থায়ী ঝিল্লির পুরুত্ব ক্ষয়ে গেছে বলে দেখতে পেলেন। যাদের করোনা হয়নি তাদের তুলনায় এই গ্রুপের এই ক্ষয়টা বেশি দেখা গেলো। সাধারণ মানুষের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেনের গ্রে ম্যাটারের পুরুত্বের পরিবর্তন অল্পবিস্তর দেখা যায়। কিন্তু তাদের চেয়েও করোনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন অনেক বেশি।
মজার বিষয় হলো, গবেষকরা যখন আলাদাভাবে ব্যক্তিবিশেষের ওপর তথ্য নিলেন, যাদের অসুস্থতা মারাত্মক, হাসপাতালে নিতে হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও ফল একই রকম দেখা গেল। ফলে করোনায় যারা হালকা, মাঝারি বা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, ব্রেনের ক্ষতির দিক দিয়ে তাদের সবারই একই রকম ঝুঁকি দেখা গেছে। পাশাপাশি গবেষকরা আরো দেখতে পেয়েছেন যে, যেসব মানুষের করোনা হয়েছে তাদের ব্রেনের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের গতি যাদের করোনা হয়নি তাদের তুলনায় অনেক ধীরগতির। তবে ব্রেনের এই ক্ষতি কতদিন স্থায়ী হতে পারে সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন