ভারতীয় পণ্য বর্জন’ আন্দোলন নিয়ে বেজায় চটেছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে উঠা এবং পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ ডাক দেয়াকে তিনি বিএনপি-জামায়াতের জিহাদি উন্মাদনায় ভারতবিরোধী বিশেষ আন্দোলন হিসেবে অবিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের পণ্য বর্জন আন্দোলন হলে বাংলাদেশের বিপদে পড়বে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের প্রয়োজনে একবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত আমাদের কাছে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল। সেই ভারতের কাছে আমরা একটি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। তিনি মনে করেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত মূলত বাংলাদেশকে ‘দ্বিতীয় পাকিস্তান’ বানানোর ষড়যন্ত্র করছে।
একটি অনলাইন পোর্টালে দেয়া সাক্ষাৎকরে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ইন্ডিয়া বয়কট’র রাজনীতি নতুন প্রজন্মের কাছে অসাধারণ ঘটনা মনে হতেই পারে। কিন্তু আমরা ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি পাকিস্তান আমল থেকেই দেখে আসছি। ১৯৬৫ সালের দিকে এমন আন্দোলন হয়েছে। যারা এখন ইন্ডিয়া বয়কটের রাজনীতি করছেন তাদের চেনার তো বাকি নেই। তারা মূলত বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ভারত থেকে যেসব পণ্য আসছে তা আমাদের প্রয়োজনে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন। ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের সাড়ে ৩ শতাংশ বাংলাদেশের সঙ্গে। এই সাড়ে ৩ শতাংশ বাণিজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে না করলে ভারতের বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু তখন আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
শাহরিয়ার কবিরের ভাষ্য, জরুরি সময়ে পেঁয়াজ, আলু, চাল, মশলা, ডাল এমনকি ডিম, কাঁচামরিচও আনতে হয় ভারত থেকে। চীন থেকে আনতে গেলে আমাদের খরচ বেশি হবে। আমেরিকা, ইউরোপ থেকে আলু আনতে গেলে তো দাম পড়বে এক হাজার টাকা কেজি। বাংলাদেশের প্রয়োজনে একবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত আমাদের কাছে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল। আমরা একটি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হতে চাই না।
এক প্রশ্নের বিশ্লেষণে শাহরিয়ার কবির বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে যুক্তি দেয় বিএনপি-জামায়াত। যদি তা-ই হয়, তবে তো একই যুক্তিতে চীনের পণ্যও বর্জনের দাবি তোলা দরকার। কারণ, চীনও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকা বিরুদ্ধে ছিল। চীনের রাষ্ট্রদূত বারবার বিবৃতি দিয়েছেন নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। রাশিয়াও তো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। তাহলে তো রাশিয়ার পণ্যও বর্জন করা দরকার।
মূলত ভারতবিরোধী সেøাগান তুলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি করার চেষ্টা চলছে দাবি করে শাহরিয়ার কবির বলেন, জিহাদি উন্মাদনায় গ্রামে হিন্দুদের ওপর হামলা শুরু হবে। পাকিস্তান আমলেও ভারতবিরোধিতার মূল টার্গেটে ছিল হিন্দুরা। ‘তোরা হিন্দু, তোরা এদেশে থাকতে পারবি না’- এটিই তো হয়ে আসছে।’ তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত বোঝাতে চায়- আমরা মুসলমান। ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদেশের হিন্দুরা ভারতে চলে যাক। পাকিস্তানি এজেন্ডাই কোনো না কোনোভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) তো পাবলিকলি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন- ‘পাকিস্তান আমলে আমরা ভালো ছিলাম’। যারা পাকিস্তান আমল দেখেনি তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াত আসলে কী চাইছে। পাকিস্তানেও এখন এমন ইন্ডিয়াবিরোধী প্রোপাগান্ডা নেই।
মালদ্বীপ সরকারের ভারতবিরোধী অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার কবির বলেন, মালদ্বীপ একটি গরিব দেশ। অশিক্ষিত। মালদ্বীপ তো আমার রোল মডেল হতে পারে না। বিএনপি এখন যা করছে, পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগও তা-ই করেছে। পাকিস্তানের শাসকদের রাজনীতি ছিল ভারতের অন্ধ বিরোধিতা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন