নরসিংদীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে মাঈনুদ্দীন সওদাগর নামের এক যুবলীগকর্মীকে নিজ বাড়িতে ডেকে এনে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন ভূইয়ার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি নির্মম নির্যাতনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তবে শাসনের ছলে দু-একটি চর-থাপ্পর দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সদর উপজেলা চেয়ারম্যান।
জানা যায়, গত ২৮ নভেম্বর নরসিংদী সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও নৌকার ভরাডুবি হয় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূইয়া নিজ ইউনিয়ন চিনিশপুরে। তিনি আশেপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্বাচনী সভায় গেলেও নিজ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কোনো সভায় অংশ নেননি।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন ভূইয়ার মদদেই চিনিশপুর ইউনিয়নে নৌকা পরাজিত হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন যুবলীগকর্মী মাঈনুদ্দিন সওদাগর। এরপর গত ৩০ নভেম্বর এই যুবলীগ কর্মীকে নিজ বাড়িতে ডেকে এনে বেধরকভাবে পিটিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূইয়া। যুবলীগ কর্মীকে নির্যাতনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
নির্যাতনের শিকার যুবলীগ কর্মী মাঈনুদ্দিন সওদাগর বলেন, আমার ইউনিয়নে নৌকা পরাজিত হওয়ায় অন্য সবার মতো আমিও একটি পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকে। এই পোস্টকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূইয়া আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। উনি নিজে এবং তার সাথে তার ভাতিজা রিফাত সহ আরো ৪/৫ জন আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমার বাড়িঘর জ্বালিয়েয়ে দিবেন, আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকিও দিয়েছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধার না করলে ওইদিনই তারা আমাকে মেরে ফেলতেন।
নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শামীম নেওয়াজ বলেন, সে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু তাকে এভাবে বাড়িতে আটকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, এর আগেও দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় আফতাব উদ্দিন ভূইয়াকে দল থেকে শোকজ করা হয়। এরই মধ্যে পুনরায় তার এ কাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে শাসনের ছলে দু-একটি চর-থাপ্পর দেওয়ার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন ভূইয়া জানান, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অডিওটি এডিট করে কিছু কথা ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নরসিংদী সদর উপজেলা উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আফতাব উদ্দিন ভূইয়া। এরপর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচিত ও সমালোচিত হন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন