বিশ্বক্রিকেটে যখন একজন সেরার অভাবে বুক ফুলিয়ে, উঁচু শিরে কথা বলা দায়; ক্রিকেট আকাশে হাজারো তারার ভিড়ে তখন আমাদের কেউ নাই। সচিন, লারা, পন্টিং, আকরাম, আনোয়ারদের সাথে যখন কেউ নেই দাঁড়ানোর, তখন সাকিন ভাঙলেন অন্তরায়।
সাকিব আল হাসান, মোটে তিনটে শব্দ। অথচ তাকে ঘিরেই একটা জাতির সহস্র গল্পের উৎস। তাকে ঘিরেই একটা জাতি স্বপ্ন দেখে, তাকে নিয়েই একটা জাতি আশায় বুক বাঁধে। নক্ষত্র হয়ে যার শুরু, এখন সে নিজেই একটা আকাশ।
সাকিব, এই দেশে এমনি একজন; যা নিয়ে শত শব্দের কাব্য লিখলেও লেখা হবে না কিছুই, হাজার শব্দের গল্পও ধারণ করবে বিন্দুবিসর্গই। রেকর্ডপাতায় জমে থাকা অযুত-নিযুত সংখ্যাও তাকে সামান্যই বলতে পারে, নামের আগে-পরে লক্ষ-কোটি বিশেষণ জুড়লেও তাই খেদ থেকে যাবে মনে।
ছোট্ট এই দেশে বলার মতো কি আছে? যা কিছু আছে তার মাঝে একটি সাকিব আল হাসান। বিশ্ব ক্রিকেটে অর্জনের শূন্য খাতায়, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির নাম সাকিব আল হাসান। বিশ্বমানচিত্রে সাকিব হয়ে উঠেছেন লাল-সবুজের এক টুকরো পরিচয়।
চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানানো অদম্য মনোবলে ভরপুর একজন সাকিব। সাকিব নামটা বাংলার ক্রিকেটের এক বিপ্লব বললেও ভুল হবে না। বাংলার ক্রিকেটে রাতের অন্ধকার-অনামিষা শেষে পেরিয়ে প্রভাতের স্নিগ্ধ আভায় বিমোহিত করার সূতিকাগার যে তিনি।
বাংলার ক্রিকেটে তার অবদান নিয়ে লিখা বোকামি বৈকি আর কিছু নয়! তার অবদান নিয়ে যেমন লিখা বোকামো, তেমনি পারফরম্যান্স দিয়েও তাকে ভাবা যথার্থতা পায়না। যদিও নামের সাথে তকমা বিশ্বসেরার, তবুও পারফরম্যান্স দিয়ে তার মূল্যায়ন করা তার সাথে বড়ই বেমানান!
এক যুগ ধরে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা এমন এক ক্রিকেটারকে শুধু পরিসংখ্যানের মাপকাঠিতে মাপা যথার্থ নয়! মাগুরার ফয়সাল থেকে বাংলাদেশের সাকিব হয়ে উঠা এই ক্রিকেটার তার যথার্থতা পূরণ করেছেন, করে যাচ্ছেন এখনো।
ক্রিকেটার সাকিব কিংবা সাধারণ সাকিব; এই নিয়ে কথা হয়েছে, হচ্ছে আর হবেও অনেক বছর। তবে বাইশ গজের দাম্ভিক সাকিবকে নিয়ে নতুন করে কি বলার আছে? শুধু বাংলার ক্রিকেট নয়, বাংলাদেশেরই সব থেকে বড় বিজ্ঞাপন এখন তিনি!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ ১৮ বছর! দিয়েছেন অনেক কিছু, সাক্ষী হয়েছেন অনেক জয়ের! হয়তো কখনো ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু কখনো দমে যাননি। লড়াই রেখেছেন অব্যাহত। প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙে গড়ছেন সাকিব, লড়াই করছেন নিজের খ্যাতি আর বয়সের ভারসাম্যের সাথেও।
সাকিব ছিলেন পেস অলরাউন্ডার; কোচের নির্দেশে পেস ছেড়ে ধরলেন স্পিন। ফলাফল চোখের সামনে। সাকিবের শুরুটাও ছিল রোমাঞ্চকর, ইসলামপুর ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট বলে নিজের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন সাকিব।
সেই যে শুরু, বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে জাতীয় দল; হ্যাংলা-পাতলা এক ছিপছিপে তরুণ থেকে আজ বিশ্বসেরা। মাঝে রয়ে গেছে অসংখ্য রেকর্ড আর প্রাপ্তি।
তাকে নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথাই তো বলা যায়, কিন্তু শব্দে-শব্দে কিংবা ছন্দে তাকে কি মাপা যায়! তাকে খুঁজে পাবেন হয়তো পরিসংখ্যানের পাতায়, কিংবা কীর্তির বিশালতায়। নয়তো খুঁজে পাবেন আবেগ, ভালোবাসা কিংবা কোনো এক রূপকথায়।
যার চোখে বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখে, যার অর্জনে গর্জে উঠে সেই সাকিব আল হাসান জীবন থেকে হারিয়ে ফেললেন ৩৬ বসন্ত! পা দিয়েছেন ৩৭ -এ। আজকের এই দিনে বাবা মাশরুর রেজা আর মা শিরিন রেজার ঘর আলো করে জন্ম নেন বাংলার ক্রিকেটের এই সুভাসিত ফুল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন