প্রশ্ন সরবরাহের শুরু থেকে শিক্ষার্থীকে বিতরণ পর্যন্ত মনিটরিং করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষাসহ পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস কোনো পদক্ষেপেই ঠেকানো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় শুক্রবার অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। কিন্তু সব আশঙ্কা উড়িয়ে অবশেষে প্রশ্নফাঁস ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা। শুক্রবার রাত ৯টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত কোথাও থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর প্রশ্নপত্রের সিলগালা প্যাকেটের সঙ্গে যোগ করা হয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি প্রশ্নপত্র সরবরাহের আগেই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযুক্ত করে দেওয়া হয় এবং একাধিক সেল ওই ট্যাকিং ডিভাইস মনিটরিং করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্র্যাকিং ডিভাইস প্রশ্নপত্র কোথায় রয়েছে, কোথাও স্থানান্তর করা বা সময়ের আগে অনানুমোদিত অবস্থায় বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশের বাইরে প্রশ্নপত্রের খাম খোলা হচ্ছে কিনা তা চিহ্নিত করতে সক্ষম। এ কারণে প্রশ্নপত্র মূল দপ্তর থেকে সরবরাহের আগেই এই ট্র্যাকিং ডিভাইসগুলো যুক্ত করা হয়। প্রশ্নপত্র প্রথম দফায় সেখানে নেওয়া হয়, পরবর্তীতে যেসব স্থানে বা যাদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছিল সবই ওই ডিভাইসের আওতায় ছিল। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ওই ডিভাইস পর্যবেক্ষণ করছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল।
এছাড়া এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও গুজব ঠেকাতে ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় সারাদেশে ১৯টি কেন্দ্রের ৫৭টি ভেন্যুতে একযোগে শুরু হওয়া এ পরীক্ষা শেষ হয় বেলা ১১টায়। এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু এক লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। সরকারি মেডিকেলে মোট আসন রয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি। আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১০৮টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন রয়েছে ১১ হাজার ১২২টি।
শুক্রবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এবারও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা বেশি। মোট আবেদনকারীর মধ্যে ৫৪ শতাংশ মেয়ে, আর ৪৬ শতাংশ ছেলে। গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, পাসের ক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা সবদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘এবার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ট্র্যাকিং ডিভাইস যুক্ত করা হয়েছে, ফলে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি এবং প্রশ্নফাঁসও হয়নি।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রণীত ভর্তি নীতিমালা ২০২৩ অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, এসএসসি, এইচএসসি, বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি, মেডিকেল ভর্তিসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। পরীক্ষা শুরু হলেই অভিযোগ উঠছিল প্রশ্নফাঁসের। সমানতালে ছড়াচ্ছিল গুজবও। এমন অবস্থায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ছাড়া সম্পন্ন করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি। সরকারি মেডিকেলে এমবিবিএসে চার হাজার ৩৫০টি আসন রয়েছে। মেধা কোটায় তিন হাজার ৩৮৪ জন, জেলা কোটায় ৮৪৬ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ জন ও উপজাতি কোটায় ৩৩ জন ভর্তি হতে পারবেন।
এছাড়া ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছয় হাজার ৭৭২টি আসনের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ৩৩ হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থী মেধা ও পছন্দেরভিত্তিতে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন। এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর প্রদান করা হবে এবং প্রতিটি ভুল উত্তরদানের জন্য ০.২৫ নম্বর কর্তন করা হবে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন