যারা সোনা আমদানি করতে চান তাদেরকে সোনা আমদানিকারক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত আট ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে। আমদানিকারককে সোনা পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের বরাবর ৩০ লাখ টাকার অফেরৎযোগ্য পে-অর্ডার করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, অনুমতি প্রাপ্ত আমদানিকারকরা অপরিশোধিত সোনা আকরিক অথবা আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানি করতে পারবেন।
এর আগে গত ২ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অপরিশোধিত সোনা আকরিক অথবা আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির জন্য আমদানিকারকদের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমতিপ্রাপ্ত সোনা পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ এর আওতায় প্রাধিকারযোগ্য আমদানিকারক হিসেবে অনুমতি ইস্যুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিকারক হিসেবে অনুমতি প্রাপ্তির ৮টি যোগ্যতা ও ডজনখানেক শর্ত মানার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সোনা পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠান হিসেবে, কিংবা প্রতিষ্ঠার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমতিপ্রাপ্ত হতে হবে। এছাড়া আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশি নিবাসী একক মালিকানাধীন, অংশীদারি প্রতিষ্ঠান, কিংবা নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের শর্তানুযায়ী, নির্ধারিত স্থানে সোনা পরিশোধনাগার স্থাপনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আমদানিতব্য অপরিশোধিত সোনা আকরিক অথবা আংশিক পরিশোধিত সোনা সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সোনা পরিশোধনাগারে থাকতে হবে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত আর্থিক সঙ্গতি (মূলধন/নিট সম্পদ, চলতি মূলধন প্রভৃতি) থাকতে হবে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ, টেলিফোন, মোবাইলসহ উন্নততর জুতসই নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেন নিয়মিত রিপোর্ট দাখিল করা যায়।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেশে প্রচলিত আইনের আওতায় প্রদত্ত সকল ধরনের লাইসেন্স, অথবা নিবন্ধন, অথবা সনদপত্র ইত্যাদি হালনাগাদ থাকতে হবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সরকার অনুমোদিত ব্যবসায়ী সংগঠনের বৈধ সদস্য হতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সোনা আমদানি করতে হলে যে কোনও ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ বরাবর আবেদন করতে হবে।
এক্ষেত্রে সোনা পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে অর্থ জমা দিতে হবে। এছাড়া হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদপত্র, মূসক নিবন্ধন, বিআইএন সনদপত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যদের কপি জমা দিতে হবে।
আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের সার্টিফিকেট, অথবা আয়কর নির্ধারণী আদেশ এবং আইটি -১০( বি)এর কপিসহ আয়কর পরিশোধ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত আর্থিক সঙ্গতি (মূলধন/নিট সম্পদ, চলতি মূলধন প্রভৃতি) সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যসহ দলিলাদি জমা দিতে হবে।
এছাড়া আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছলতা সম্পর্কে তফসিলি ব্যাংকের সনদপত্রসহ ঋণ প্রতিবেদন (সিআইবি রিপোর্ট )জমা দিতে হবে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের নিয়োজিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ছবিসহ জীবন বৃত্তান্ত দিতে হবে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হলে উক্ত কোম্পানির নিবন্ধন সনদ, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের কপি, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান মালিক, অথবা অংশীদারদের, অথবা পরিচালকদের বিস্তারিত তথ্যসহ উপযুক্ততা ও যথার্থতা সম্পর্কে পুলিশ ছাড়পত্র, আয়কর পরিশোধ প্রত্যয়ন পত্র, সচ্ছলতার সনদপত্র এবং ঋণ প্রতিবেদন (সিআইবি রিপোর্ট) জমা দিতে হবে। এছাড়া সোনা পরিশোধনাগারের নির্ধারিত স্থানের মালিকানা দলিলের কপি, অনুমতি ফি বাবদ মহাব্যবস্থাপক, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের নামে ৩০ লাখ টাকার অফেরৎযোগ্য পে অর্ডার, এবং ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাঠামো নিরাপত্তা ব্যবস্থা যোগাযোগ/তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে বিবরণী জমা দিতে হবে।
অনুমতির মেয়াদকাল
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অনুমতি প্রদানের তারিখ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে। মেয়াদোত্তীর্ণের তিন মাসের আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমতি নবায়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের কপি জমা দিতে হবে, আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের সার্টিফিকেট, অথবা আয়কর নির্ধারণী আদেশ এবং আইটি -১০( বি)এর কপিসহ আয়কর পরিশোধ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। অনুমতির নবায়ন ফি বাবদ মহাব্যবস্থাপক বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের নামে পাঁচ লাখ টাকা ফেরতযোগ্য পে অর্ডার, দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য সকল ধরনের লাইসেন্স, অথবা নিবন্ধন সনদপত্র ইত্যাদি হালনাগাদের কপি জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছা করলে অনুমতি ইস্যুর আগে আবেদনকারী সোনা পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে পারে। অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং কোনও প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন প্রদান বা প্রত্যাখ্যান ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংক সংরক্ষণ করে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন