দীর্ঘদিন পর ফের জনসম্মুখে আসলেন আড়ালে থাকা তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। শুক্রবার আফগানিস্তানের রাজধানীতে আলেমদের একটি বড় সমাবেশে উপস্থিত হন তিনি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই সমাবেশে আখুন্দাজাদা বক্তব্য রাখেন বলে তালেবান সরকারের মুখপাত্র বিলাল কারিমি টুইটারে জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় রেডিওতে সম্প্রচারিত তার আগমনকে ‘আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত দীর্ঘজীবী হোক’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের সমাবেশে তিন হাজারেও বেশি আলেম কাবুলে জড়ো হয়েছেন। ওই সমাবেশে আখুন্দজাদার উপস্থিতি নিয়ে কয়েকদিন ধরে গুজব শোনা যাচ্ছিল। যদিও ওই সমাবেশে গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এর আগে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের মাস দুয়েক পর গত বছরের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছিলেন আখুন্দজাদা। সে সময় কান্দাহারে দারুল উলুম হাকিমা মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন তালেবানের শীর্ষ নেতা।
তবে গত বছরের আগস্টে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর আখুন্দজাদার কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণ করা হয়নি। ওই সময়ও রেডিওতে তার বক্তব্য প্রচারিত হয়েছিল।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে সংগঠনটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দেখা মিললেও সর্বোচ্চ নেতা (সুপ্রিম লিডার) আখুন্দজাদা পর্দার আড়ালেই ছিলেন। জনসম্মুখে খুব একটা আসার নজির নেই তার।
তালেবানের এই সুপ্রিম লিডার কোথায় আছেন তা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশ করছে।
তালেবান নেতারা শুরু থেকেই জানিয়েছেন, আখুন্দজাদা আফগানিস্তানেই আছেন। শিগগিরই তিনি জনসম্মুখে আসবেন।
আখুন্দজাদা পাকিস্তানের সেনা হেফাজতে রয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে জানিয়েছিল।
তালেবান নেতা আখতার মানসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৫ মে থেকে তিনি তালেবানের সুপ্রিম কমান্ডারের দায়িত্বে রয়েছেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ।
আশির দশকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবে সামরিক নেতার তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবে তার পরিচিতি বেশি।
আখুন্দজাদা ১৯৯০ এর দশকে আফগানিস্তানের শরিয়া আদালতের প্রধান ছিলেন। আখুন্দজাদার বয়স ৬০ বছর বলে ধারণা করা হয় এবং জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তিনি কোয়েটা শুরার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। এরা মূলত পাকিস্তানের কোয়েটাভিত্তিক আফগান তালেবান নেতা।
দলের সুপ্রিম লিডার হিসেবে রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় বিষয়ের প্রধান আখুন্দজাদা। উচ্চশিক্ষিত আখুন্দজাদা সেই অর্থে তালেবানের হয়ে কার্যকলাপে অংশ নেয় না। বরং ইসলামের নানা ব্যাখ্যার কাজ করে থাকেন তিনি।
সোভিয়েত পতনের পর ১৯৯২ সালে কাবুলের দখল নেয় মুজাহিদিনরা। বুরহানুদ্দিন রব্বানি হন নতুন প্রেসিডেন্ট। রব্বানির সময় মুজাহিদিনদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ধীরে ধীরে কাবুলের দখল নেয় তালেবান।
১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের-শাসন শুরু হয়। তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান ঘোষণা করে। কিন্তু এই রাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি।
আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলাকে কেন্দ্র ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হানা দেয়। তারা তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
দীর্ঘ দুই দশক যুদ্ধের পর ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এক চুক্তিতে সই করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ১৪ মাসের মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়।
গত বছরের মে মাসে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। এরপর তালেবান হামলা চালিয়ে একের পর এক এলাকা দখল করতে থাকে। গত বছরের ১৫ আগস্ট তারা রাজধানী শহর কাবুল করে নেয়। এরপর তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান ঘোষণা দেয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন