তথাকথিত ‘হিন্দুত্ব’ ও ‘হিন্দুধর্ম’ নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে বিতর্ক ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে – আর তার রেশ ধরেই ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদের নৈনিতালের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে একদল অপরাধী।
গত সপ্তাহেই প্রকাশিত হয়েছে অযোধ্যা নিয়ে সালমান খুরশিদের নতুন বই ‘সানরাইজ ওভার অযোধ্যা: নেশনহুড ইন আওয়ার টাইম’। সেই বইয়ে হিন্দুত্বর সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো উগ্র ইসলামি গোষ্ঠীগুলির তুলনা টেনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। ভারতের শাসক দল বিজেপি প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিল সালমান খুরশিদ ভারতের হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করেছেন এবং ‘সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি’ করছেন।
সেই বিতর্ক শুরুর দিন তিনেকের মধ্যেই উত্তরাখন্ডের পাহাড়ে সরাসরি সালমান খুরশিদের বাড়িতে হামলা চালাল হিন্দুত্ববাদীরা – জ্বালিয়ে দিল সেই বাড়ির একটা বড় অংশ।
এদিন ফেসবুক ও টুইটারে সালমান খুরশিদ ওই ঘটনার যে ছবি পোস্ট করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে নৈনিতালে তার বাড়ির একটা অংশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। দরজা ভস্মীভূত হয়ে গেছে, জানালা ভেঙে চুরমার – আর বাড়ির কর্মীরা আগুন নেভানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সেই সঙ্গেই তিনি লিখেছেন, ‘যে বন্ধুরা একদিন এখানে এসেছিলেন তাদের জন্য এই দরজা আমি খুলে দিতে চেয়েছিলাম। যদি বলি এটা কিছুতেই হিন্দুধর্ম নয়, তাহলে কি এখনও আমি ভুল বলব?’
সালমান খুরশিদের নতুন বই
সালমান খুরশিদের নতুন বই
কুমায়ুন পুলিশের ডিআইজি নীলেশ আনন্দ বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, এই আগুন লাগানোর ঘটনায় তারা মোট ২১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। রাকেশ কপিল নামে ওই অঞ্চলের স্থানীয় একজন হিন্দুত্ববাদী অ্যাক্টিভিস্ট ও তার আরও বিশজন সহযোগীকে খোঁজা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
কংগ্রেস নেতা ও এমপি শশী থারুর এই ঘটনার পরই টুইট করেছেন, ‘এটি চরম লজ্জাজনক। সালমান খুরশিদ এমন একজন স্টেটসম্যান যিনি আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতকে বারে বারে গর্বিত করেছেন। তিনি একজন মধ্যপন্থী, সেন্ট্রিস্ট এবং চিরকাল এদেশে সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলেছেন। আমাদের রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতার বহর যেভাবে বাড়ছে, এদেশের ক্ষমতাসীনদের তার তীব্র নিন্দা করা উচিত।’
সালমান খুরশিদের নতুন বইয়ে ‘হিন্দুত্ব’ নিয়ে তার মন্তব্যের জেরেই যে তার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনও একরকম নিশ্চিত। তবে তারা জানিয়েছেন, তদন্তে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শশী থারুরের টুইট বার্তা
সালমান খুরশিদের বই প্রকাশিত হওয়ার পরই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী একটি অনুষ্ঠানে বলেন, হিন্দুধর্ম আর হিন্দুত্ব দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। হিন্দুধর্ম কখনো ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ সমর্থন করে না, কিন্তু ‘হিন্দুত্ব’-র নামে বিদ্বেষ ও বিভাজনের রাজনীতি ছড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কিন্তু বইয়ে সালমান খুরশিদের মন্তব্যকে লুফে নিয়ে বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেন, রাহুল গান্ধী ও তার দলের আসলে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধেই একটা ‘প্যাথোলজিক্যাল ঘৃণা’ আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সালমান খুরশিদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতেও শুরু করেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
কংগ্রেসের একটা মহলও অবশ্য সালমান খুরশিদের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। দলের অন্যতম প্রধান মুসলিম নেতা গুলাম নবি আজাদ যেমন বলেছেন, ‘একটা রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে আমরা হিন্দুত্বের সঙ্গে একমত না-হতে পারি, কিন্তু তাই বলে আইসিস বা জিহাদি ইসলামের সঙ্গে হিন্দুত্বর তুলনা করাটা অতিরঞ্জন হবে, তথ্যগত ভাবেও সেটা সঠিক নয়!’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন