করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার পরিবার এই তথ্য জানিয়েছে। কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হবার পরবর্তী জটিলতা থেকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করার পর প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ব্যক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন মি. পাওয়েল।
রিপাবলিকান দলের জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন।
ইরাক যুদ্ধে সমর্থন সংগ্রহে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেজন্য অনেকের কাছে তিনি সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয় মি. পাওয়েল কোভিডের সম্পূর্ণ টিকা পেয়েছিলেন।
সেনা বাহিনীতে কেরিয়ার শুরু
নিউ ইয়র্ক সিটির হারলেমে জন্ম হয় কলিন লুথার পাওয়েলের ৫ই এপ্রিল ১৯৩৭ সালে। তার বাবামা ছিলেন জামাইকা থেকে আমেরিকায় যাওয়া অভিবাসী।
কলিন পাওয়েল ২০০৩ সালে জাতি সংঘে দাবী করেন, ইরাক ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে (যেটা পরবর্তীতে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়)
তিনি নিজেই বলেছিলেন স্কুল ছাড়ার সময় ভবিষ্যত নিয়ে তার কোন পরিকল্পনা ছিল না।
ভূবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সময় তিনি রিজার্ভ অফিসারদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দেন, যে কর্মসূচির মুল লক্ষ্য ছিল ভবিষ্যত সামরিক নেতাদের বাছাই করা।
স্নাতক পাশ করার পর ১৯৫৮ সালে তিনি আমেরিকান সেনাবাহিনীতে সেকেণ্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে প্র্রথম দায়িত্ব পান।
মি. পাওয়েল ১৯৮৭ সালে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন এবং জর্জ এইচডাব্লিউ বুশ ১৯৮৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি জয়েন্ট সেনা প্রধানদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন, যেটি ছিল আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ সামরিক পদ।
তিনিই প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান যিনি ৫২ বছর বয়সে এই পদে আসীন হন এবং তার আগে এত তকম বয়সী আর কেউ এই পদ গ্রহণ করেননি।
পাওয়েল ডকট্রিন ও ইরাক হামলা
পাওয়েল মতবাদের প্রথম উন্মেষ ঘটে ১৯৯০ সালে যখন উপসাগরীয় যুদ্ধে তিনি তার রণকৌশল প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন কূটনৈতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তবেই আমেরিকার সামরিক শক্তি ব্যবহার করা উচিত।
তিনি সেনা বাহিনী ত্যাগ করেন ১৯৯৩ সালে এবং তার আত্মজীবনী লেখা ও স্বেচ্ছাসেবা মূলক কাজে সময় ব্যয় করেন।
এ সময় তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২০০০ সালে জর্জ ডাব্লিউ বুশ তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন।
নভেম্বর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সাথে বৈঠকে জেনারেল কলিন পাওয়েল এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেইনি
নাইন ইলেভেন হামলার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের মত কট্টরপন্থীদের সাথে তার মতবাদের বিরোধ বাঁধে। মি. রামসফেল্ড ইরাকে হামলা চালানোর পক্ষে ছিলেন- এমনকি যদি অন্য কোন দেশ আমেরিকাকে সমর্থন না করে তাহলেও- যে যুদ্ধ পরিচিতি পেয়েছেল "ওয়ার অন টেরর" বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নামে।
কলিন পাওয়েল শেষ পর্যন্ত ওই যুদ্ধে জর্জ ডাব্লিউ বুশকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনিই ২০০৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
আঠারো মাসের মধ্যে সাদ্দাম হুসেনের পতন ঘটে। মি. পাওয়েল তখন স্বীকার করেন যে, ইরাকী নেতার হাতে "ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রসম্ভার" থাকার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য ভুল ছিল।
এরপর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।
ইরাক যুদ্ধ- জীবনে একটি কালো দাগ
মধ্যপন্থী রিপাবলিকান কলিন পাওয়েলের সঙ্গে তার দলের বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে, যখন তিনি বারাক ওবামাকে সমর্থন করেন। এরপর বেশ কয়েকজন শীর্ষ মার্কিন রাজনৈতিক নেতার সামরিক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন।
তিনি ভিয়েতনামে যুদ্ধ করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনা পরবর্তীতে তার সামরিক ও রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল।
তবে ইরাক যুদ্ধে সমর্থন সংগ্রহে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেজন্য অনেকের কাছে তিনি সমালোচনার শিকার হন। সেই সময় ক্রুটিপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া তার বক্তব্য তার জীবনে একটি কালো দাগ হিসাবে থেকে গেছে।
পরবর্তীতে ২০০৫ সালে এবিসি নিউজ চ্যানেলকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে মি. পাওয়েল বলেছিলেন, ''এটা তখনও ছিল কষ্টকর, এটা এখনও আমাকে কষ্ট দেয়।''
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন