নিজেদের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে এল ভারত। এই প্রথম আফগানিস্তানের তালিবানের কোনও গোষ্ঠী এবং নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল নয়াদিল্লি।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তালিবানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই ক্রমশ আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উপস্থিতিতে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করা তালিবান নেতা মোল্লাহ বরাদরের সঙ্গেই আলোচনা শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই সেই আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে তারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে পাকিস্তান ও ইরানের মদত পাওয়া তালিবানি নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে না। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর মদতপুষ্ট হাক্কানি বা কোয়েটা সুরার সঙ্গেও কোনওরকম আলোচনায় যেতে নারাজ ভারত। তালিবানের যে গোষ্ঠীগুলো ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে পরিচিত, সেগুলোর জন্যই আলোচনার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে, যা গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। তাতে বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।
অথচ এতদিন কোনওভাবেই তালিবানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চাইত না ভারত। নব্বইয়ের দশকে তালিবানি শাসনের সময় তাজিকস-সহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর তৈরি সংযুক্ত ফ্রন্টের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এক কর্মকর্তা বলেছেন, তালিবানকে যুক্ত না করার যে পূর্ববর্তী অবস্থান ছিল এবং নর্দান জোটে যাবতীয় নজর দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি আমরা। যে ফ্রন্টের সমর্থন করেছিল ভারত, রাশিয়া এবং ইরান।
নয়া পদক্ষেপ নিয়ে এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কিন্তু তারপর থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই মনে করছে যে তালিবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ভালো।’ তবে ওই কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-সহ আফগানিস্তানের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার সঙ্গে সমান্তরালভাবে তালিবানদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে নয়াদিল্লি।
কিন্তু কেন আচমকা দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে এল ভারত? গেটওয়ে হাউসের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক ফেলো সমীর পাটিলের মতে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তার কথায়, ‘রাজনৈতিক নিষ্পত্তি ছাড়া কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নাগরিকদের যুদ্ধ নিশ্চিত। সেইসঙ্গে নিশ্চিত যে কাবুল দখল করবে তালিবান। তাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতেই তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত।’
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাছাড়া তালিবানদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে যেভাবে অনিচ্ছা দেখিয়ে এসেছে ভারত, তা থেকে সরে এসে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। একমাত্র এভাবেই আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা কমিয়ে আনতে পারে।’
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন