গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে সেনা ও পুলিশবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। চলমান এই বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান জানতে ও প্রাণঘাতী দমনপীড়ন পরিচালনা করতে চীনের তৈরি ড্রোন ব্যাবহার করছে দেশটির সামরিক জান্তা সরকার। এশিয়া টাইমসের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের মাথার ওপরে সম্প্রতি ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। এই শহরটিতেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। পর্যবেক্ষরা বলছেন, বিক্ষোভকারীদের অবস্থান নির্ণয় ও তাদের ওপর নজরদারি চালাতে চীনা ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারে চার মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সাঁড়াশি অভিযানে এ পর্যন্ত ৭৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। দেশটিতে দমনপীড়ন চালাতে চীনের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করছে সরকার। এর ফলে বেইজিং গণতন্ত্রের পতন ঘটানো মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করছে- বিদ্রোহীদের এই অভিযোগকে নিঃসন্দেহে আরও জোরাল করবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক জেনস ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স রিভিউ এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) থিংক ট্যাঙ্ক ‘অজ্ঞাত বায়বীয় যান বা ইউএভি’কে চীনের তৈরি সিএইচ-৩ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সিএসআইএস জানিয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করা গেছে কেন্দ্রীয় মান্দালয় শহরের দক্ষিণে মেকটিলা বিমান ঘাঁটিতে ও মিয়ানমার বিমান বাহিনীর কেন্দ্রীয় অপারেশন সেন্টারে এবং বেশ কয়েকটি স্কোয়াড্রনে সিএইচ-৩ ড্রোনের উপস্থিতি দেখা গেছে। সিএইচ-৩ ড্রোনগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজি কর্পোরেশনের (সিএএসসি) চীনা এরোস্পেস লং-মার্চ ইন্টারন্যাশনাল বিভাগের তৈরি।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে মিয়ানমারের শ্যান্ট বিমান ঘাঁটিতে প্রায় এক ডজন সিএইচ-৩ ড্রোন সরবরাহ করেছে চীন। তখন মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নৃগোষ্ঠী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে এগুলো ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছিল।
এসআইপিআরআই’র বরাতে এশিয়া টাইমস জানিয়েছে, ২০১০-২০১৯ সালে ৫৬ শতাংশ অস্ত্র মিয়ানমার চীন থেকে আমদানি করেছে। ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে এবং ১২ শতাংশ ক্যাটাগরিভিত্তিক অন্যদেশ যেমন ইউক্রেন, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েল থেকে এনেছে। এসআইপিআরআই’র একই গবেষণায় দেখানো হয়, একই সময়ে অস্ত্র আমদানিতে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে মিয়ানমার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন