ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিধস জয়ের পর বিজেপির নেতারা দাবি করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে, নারীদের গণধর্ষণের মতো জঘন্য অভিযোগও তুলেছেন তারা।
নানুরে বিজেপি কর্মী ও এজেন্ট অপর্না রায়কে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে বিজেপির আইটি সেল ফলাও করে প্রচার করে। তাদের প্রচারণায় বিশ্বাস করে বিজেপির অনেক নেতারাও অপর্না রায়ের গণধর্ষণের বিরুদ্ধে ফেসবুক-টুইটারে আক্রমণাত্মক স্ট্যাটাস দেন। তারা দাবি করেন, তাদের নারী কর্মী ও এজেন্টকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু যে নারীকে নিয়ে এত প্রচারণা সেই নারীই সরাসরি সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ছড়ানো হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যা।
বিজেপির আলোচিত সেই নারী এজেন্ট অপর্না রায় বলেন, নির্বাচনের দিন আমার বাড়ির সামনে হই-হুল্লোড় হচ্ছিল বলে ভয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কে বা কারা রটিয়েছে যে আমাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ কথা একেবারেই মিথ্যে। আমার সঙ্গে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
মঙ্গলবার তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অপর্না রায়।
তৃণমূল নেতা অনুব্রত বলেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ একেবারেই ভুয়ো। গোটা ঘটনাটাই বিজেপি-র আইটি সেলের কাজ। নেটমাধ্যমে গণধর্ষণের ভুয়ো খবর ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীও। যদিও গোটা বিষয়ে বিজেপি-র জেলা নেতৃত্ব কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
নির্বাচনের পর থেকেই নানুরের বিজেপি কর্মী তথা এজেন্ট অপর্ণা রায়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির কয়েকজন নেতা। পরে এটি ফলাও করে প্রচার করতে থাকে বিজেপির আইটি সেল।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই টুইটার এবং ফেসবুকে বিজেপি নেতারা দাবি করতে থাকেন যে ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়। এরপরই বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে ওই নারীকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত।
এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতা অনুব্রত বলেন, এভাবে ভুয়ো খবর রটাচ্ছে বিজেপির আইটি সেল। এভাবে একজন নারীর বদনাম করা একেবারেই ঠিক নয়। তিনি এখন পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷
তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানুরের দু’জন মহিলা এজেন্টকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি। এমনকি, বহু মেয়ের শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। এ নিয়ে নেটমাধ্যমে বারবার পোস্ট করতেও দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে।
এদিকে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, কিছু পার্টির লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছে যে নানুরে দু’জন বিজেপি নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ এই খবর একেবারেই ভুয়ো। এমন কিছুই হয়নি। আমরা নানুরের বিজেপি প্রার্থী ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু এমন তথ্যই তাদের কাছে নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর বীরভূমে বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। যে বা যারা এমন করছে, তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এ নিয়ে আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে জেলা বিজেপি সভাপতি ধ্রুব সাহাকে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পশ্চিমবঙ্গ দখল নিতে আইটি সেলকে অমিত শাহর পরামর্শ
জিনিউজের খবরে বলা হয়, বিজেপির আইটি সেল কীভাবে কাজ করবে-তা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কৌশল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আইটি সেলের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ দখলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আপনাদেরই। স্রেফ উৎসাহ থাকলে হবে না, যুদ্ধে জিততে গেলে দরকার রণকৌশলও।
অমিত শাহ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আইটি সেল বা সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত চারটি দল থাকা উচিত। একটি দল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করবে। সেই মতো 'কন্টেট' তৈরি করবে আর একটি টিম। সেসব 'কনটেন্ট' সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করবে আরেকটি দল। আর এসব কনটেন্ট মানুষের মাঝে কতটা সাড়া ফেলল-তা জানাবেন চতুর্থ দলের সদস্যরা।
কলকাতায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীসহ আরও অনেকে।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন