করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনে চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়ায় ঈদ সামনে রেখে কেনাকাটায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেচে। বিশেষত ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্নবিত্তের মানুষের কেনাবেচা ভালোই জমে উঠেছে।
মঙ্গলবার (৪ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় রাস্তায় মানুষ কম থাকলেও ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড়। এখানে সব বয়সী নারী-পুরুষের জন্য বাহারি রঙের বিভিন্ন ডিজাইনের জামা-কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। সারি সারি এসব দোকানগুলো থেকে প্রতিনিয়তই পছন্দমতো জামা-কাপড় ও শার্ট কিনছেন নগরবাসী।
মানুষের চাপে মার্কেটগুলো আশেপাশে দেখা দেয় যানজট। ক্রেতাদের ভিড় সামাল দিতে নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে। তাই পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধির মানার বিষয়টি উপেক্ষিত। চলছে কেনাকাটার ধুম। যে যেভাবে পারছে কেনাকাটা করছে।
পোশাকের পাশাপাশি কসমেটিকস ও অলংকারের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। চলাচলের বিধিনিষেধের মধ্যেও সুলভ মূল্যে কেনাকাটা করতে পারায় খুশি নারী ক্রেতারা।
গুলিস্থান হকার্স মার্কেটের সামনের ফুটপাতের বিক্রেতা জুয়েল, আশিক, রাজনসহ একাধিক দোকানদার বলছেন, বিক্রি বেশ ভালো। গত দুদিন থেকে একটু একটু করে বিক্রি বাড়ছে। করোনার কারণে দোকান বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে এভাবে বেচাবিক্রি চললে তা কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
তারা বলেন, গত বছর রমজানের ঈদে কোনও বিক্রিই হয় নাই। কোরবানির ঈদে কিছু বিক্রি হয়েছিলো। এবছর লকডাউনে কখনও দোকান বন্ধ থাকে, আবার কখনও খুলে দেয়া হয়। যার কারণে বিক্রি তেমন হয় নাই। ঈদের সময়টাতে বেচাবিক্রি না হলে একেবারে না খেয়ে মরতে হবে তাদের। তবে গত দুদিন ধরে বিক্রি বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে বলে আশা বিক্রেতাদের।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ফুটপাতের দোকানগুলোতে বিভিন্ন বয়সীদের পোশাকসহ বিক্রি হচ্ছে শিশুদের ফ্রক, টি-শার্টসহ বাহারি পোশাক। বর্তমানে মানুষের আয় কমেছে। যারা ধনী তারা ব্র্যান্ডেড শপগুলো থেকে কেনাকাটা করেন। কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে তেমন টাকা নেই। সেজন্যই বিক্রি কম। তবে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে ফুটপাতের বাজার।
ফুটপাতের মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ২৫০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায়, টি-শার্ট ১২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, শাড়ি ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়াটার জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা।
জিরো পয়েন্টের পাশে শিশুদের জামা বিক্রি করছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী লতিফ। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘গত দুদিন ধরে একটু বিক্রি বেড়েছে। যদি বিক্রি ভালো হয় তাহলে যে ক্ষতি হয়েছে তা একটু হলেও পোষাবে। তবে বাস যখন চলবে বিক্রি আরও বাড়বে।’
শুধু গুলিস্থানেই নয়, বেচাকেনা জমে উঠেছে মতিঝিল, নিউমার্কেটসহ রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাতের দোকানগুলোতে।
মতিঝিল এলাকার ফুটপাতের শার্ট বিক্রেতা নাজমুল ইসলাম জানান, বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। বিক্রিও ভালো। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারাও এখান থেকে পছন্দের জামা ও প্যান্ট কেনাকাটা করেন। তবে করোনার কারণে বিক্রি বন্ধ ছিলো দোকানপাট খোলে দেওয়ার পরে প্রথম প্রথম বিক্রি হতো না এখন একটু একটু করে বিক্রি বাড়ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের বিধি নিষেধ শিথিল করে ২৫ এপ্রিল রবিবার থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে জানিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারপর থেকে ফুটপাতের এই দোকান গুলোও খুলে দোকানিরা। তবে প্রথম পর্যায় হতাশায় ছিলো বিক্রি হবে কিনা। এখন বিক্রি বাড়ায় দোকানিদের মুখে আশার আলো ফুটে উঠতে দেখা গেছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন