রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দর্শনীয় স্থান রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান দেখতে যান জাপানি নাগরিক টাকেরু হিবি ও শিনোবু কানেমাসু। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর তারা কবরস্থান থেকে থেকে বের হতে গেটের দিকে যেতে থাকেন। এসময় চার ছিনতাইকারী জাপানি দুই নাগরিককে গেট বন্ধ বলে অন্য গেট দিয়ে বের হওয়ার পথ দেখান। তাদের কথায় বিশ্বাস করে জাপানি নাগরিকরা তাদের সঙ্গে যেতে থাকেন।
কিছুদূর যাওয়ার পর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান গেটের ভেতরে বোডঘাটের পশ্চিম দিকে লেকের রোড পার হয়ে ছিনতাইকারীরা ছুরি বের করে যা কিছু আছে বের করতে বলেন। আসামিরা তাদের কিলঘুষি মেরে ছুরিকাঘাত করার ভয় দেখান। তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট, জাপানি মুদ্রা ১ লাখ ৫০ হাজার ইয়েন, নগদ বাংলাদেশি ২৫ হাজার টাকা, একটি আইফোন ১২প্রো-ম্যাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যান ছিনতাইকারীরা।
এরপর তাদের তাড়া করে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মূল ফটক দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। আসামিরা ভুল পথ দেখিয়ে জাপানি দুই নাগরিকের কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় শুক্রাবাদ হোটেল নন্দিনীর ম্যানেজার তারেক আহমেদ (৪৫) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে সম্প্রতি পাঁচ ছিনতাইকারীকে আসামি করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সামছুল হক খান।
মামলার বাদী এজহারে উল্লেখ করেন, গত বছর (২০২৩ সালের) এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় শুক্রাবাদ হোটেল নন্দিনী আবাসিক থেকে জাপানি নাগরিক টাকেরু হিবি ও শিনোবু কানেমাসু দর্শনীয় স্থান রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান দেখতে রওনা হন। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় তারা সেখানে পৌঁছান। সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তা প্রহরীদের অনুমতি নিয়ে কবরস্থানের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং কবরস্থানসহ লেকের আশপাশে ঘুরে দেখতে থাকেন। রাত আনুমানিক ৮টা ৪৫ মিনটে নিরাপত্তা প্রহরীরা তাদের তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে বলেন।
সে অনুযায়ী টাকেরু হিবি ও শিনোবু কানেমাসু কবরস্থান থেকে বের হতে গেটের দিকে যেতে থাকেন। তখন চার ছিনতাইকারী সেদিকের গেট বন্ধ বলে তাদের জানায় এবং অন্য গেট দিয়ে বের হওয়ার পথ দেখায়। এ কথায় বিশ্বাস করে জাপানি নাগরিকদ্বয় তাদের সঙ্গে যেতে থাকেন।
মামলার এজহারে আরও বলা হয়, কিছুদূর যাওয়ার পর রাত আনুমানিক ৯টা ৫ মিনিটে রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান গেটের ভেতরে বোডঘাটের পশ্চিম দিকে লেকের রোড পার হয়ে চার ছিনতাইকারী ছুরি বের করেন এবং ভয় দেখিয়ে টাকেরু হিবি ও শিনোবু কানেমাসুকে যা কিছু আছে বের করে দিতে বলেন। আসামিরা তাদের কিলঘুষি মেরে ছুরিকাঘাতের ভয় দেখান।
এসময় তারা জাপানি দুই নাগরিকের সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট , জাপানি মুদ্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ইয়েন (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫০ টাকা), নগদ বাংলাদেশি ২৫ হাজার টাকা, একটি আইফোন ১২প্রো-ম্যাক্স, টাকেরু হিবির জাপানি ড্রাইভিং লাইসেন্স, দুটি ক্রেডিট কার্ড ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও কানেমাসুর কাছ থেকে ৩ হাজার ৮০০ ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার ২ টাকা) এবং নগদ ৩ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তাদের তাড়া করে কবরস্থানের প্রধান ফটক দিয়ে বের করে দেয়া হয়।
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, জাপানি নাগরিকদ্বয়ের মালামাল ও পাসপোর্ট উদ্ধার করার জন্য সম্ভাব্য এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে গোপন সূত্র জানায়, আসামি স্বপন বেড়িবাঁধ বোটঘাট বরকতের বস্তিতে আছেন। সেখানে গেলে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রায়ের বাজার বধ্যভূমি কবরস্থান সংলগ্ন পূর্ব দিকের খালি মাঠের পশ্চিম কোণা থেকে একটি লাল রংয়ের জাপানি পাসপোর্ট, যার ওপর ইংরেজিতে APAN PASSPORT লেখা আছে, যেটি ছেঁড়া এবং বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত; একটি হেলথ কার্ড, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, একটি ভিসা কার্ড, যার উপরে ইংরেজিতে PARCO লেখা আছে।
এরপর আসামিকে সাতদিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন সহকারে আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রযুক্তির সহায়তার সীতাকুন্ডু থেকে তদন্তে প্রাপ্ত আসামি আবু রাসেল প্রত্যয় এবং জিহাদুল ইসলাম মামুনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে একটি আইফোন ১২প্রো-ম্যাক্স, একটি মোবাইল ওয়াইফাই ডিভাইস, একটি কালো রংয়ের ব্লুটুথ মাইক্রোফোন এবং তিনটি জাপানি ইয়েন, যার প্রতিটির জাপানি মূল্যমান দশ হাজার ইয়েন- এসব উদ্ধার করে। পরবর্তী সময়ে আবু রাসেল দোষ স্বীকার করে বলেন, ওইদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ভেতরে পশ্চিম দিকের লেকের পাড়ে সে নিজে, দুলাল, জনি এবং স্বপন আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দুই বিদেশি নাগরিককে দেখে তাদের ভুল পথ দেখিয়ে সব ছিনিয়ে নেন তারা। পরে তারা লুণ্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন এবং কক্সবাজার চলে যান।
সার্বিক তদন্ত এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থাসহ সাক্ষ্য-প্রমাণে তদন্তে প্রাপ্ত গ্রেফতার আসামি মো. স্বপন (২৮), মো. আবু রাসেল প্রত্যয় (২৪), মো. দুলাল হোসেন (২৬) এবং জিহাদুল ইসলাম মামুন (২০) ও সুজনের (৪১) অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলেও চার্জশিটে উঠে এসেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন