রাজধানীর উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনায় শাস্তি পেতে হচ্ছে না তদন্তে দোষী হওয়া চীনা ঠিকাদারকে। উল্টো তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে চীনা নাগরিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে ঠিকাদার। বাতিল হচ্ছে না চুক্তিও। ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল হলে প্রকল্প ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় গেলে প্রকল্প পিছিয়ে যেতে পারে ৩-৪ বছর। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিরও আশঙ্কা রয়েছে। তাই শাস্তি না দিয়ে ঠিকাদারের কাছে নিহতের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। আর এ ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়া হবে বীমার মাধ্যমে।
গত ১৫ আগস্ট বিকালে রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়ে গার্ডার স্থানান্তরের সময় ক্রেন কাত হয়ে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে ৫ জন নিহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই চুক্তি বাতিল করে ঠিকাদইর প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়। কিন্তু শেষমেশ সে পথে যাচ্ছে না সরকার। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। যদিও নিরাপত্তাব্যবস্থায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
সূত্রমতে, ঠিকাদারকে জরিমানা কিংবা অন্য কোনো শাস্তি দিলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীকে গুনতে হবে টাকা। এর কারণ হলো, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের জমি হস্তান্তর ও পরিষেবার লাইন স্থানান্তর করতে না পারায় ঠিকাদার প্রায় ৭ মাস কাজ করতে পারেনি। এ জন্য দায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। দেরি হওয়ায় ‘ডিলেই ড্যামেজ’ বাবদ ১০৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ঠিকাদার। আর নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে চুক্তি মূল্যের ১০ শতাংশ ‘লিকুইডেটেড ড্যামেজ’ বাবদ ঠিকাদারকে জরিমানা করতে পারবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এ হিসাবে চীনা ঠিকাদারকে সর্বোচ্চ ৮৫ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে সওজ। তাতে হিসাব কষে দেখা যায়, উল্টো ১৯ কোটি টাকা পাওনা হবে চীনা ঠিকাদারের।
সূত্রমতে, বিআরটির নির্মাণ কাজ চলাকালে ঠিকাদারকে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার শর্ত ছিল। নির্মাণ চলাকালে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার শর্তটিও মানা যায়নি। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে, ১০৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঠিকাদারকে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।
গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বিআরটি প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঠিকাদারের গাফিলতি ছিল। চীনা ঠিকাদার চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড শুরু থেকেই অর্থ সংকটে রয়েছে। সে কারণে কখনো ঠিকভাবে কাজ করেনি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী তখন জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদার দায়ী। ১২টি দায় পাওয়া গেছে ঠিকাদারের। প্রতিবেদন ঠিকাদারের নিয়োগকারী সংস্থা সওজকে পাঠানো হবে। সওজ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এখন শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করতে চায় সওজ। এমনিতেই নির্মাণকাজ বন্ধের কারণে এক মাস পিছিয়ে গেছে।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানিয়েছে, চীনের ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তারা তাদের ‘প্রত্যাশিত যথাযথ গুরুত্ব’ না দেওয়ায় অখুশি হয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গেঝুবা সে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই চীনের চাপ ছিল ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কঠোর না হতে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাসের জন্য সাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশেষায়িত লেন বা বিআরটির নির্মাণ কাজ চলছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) তিন সংস্থার ঋণে ২০১২ সালের এ প্রকল্প চার বছরে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। ছয় বছর মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্র রয়েছে। ধীরগতির এ প্রকল্পের কারণে চরম ভোগান্তি হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর অংশে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন