'গুম' হওয়ার পর ফিরে আসা বেশিরভাগ মানুষ মিডিয়ার কাছে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে চান না। ফলে, তাদের কোথায় এবং কীভাবে রাখা হয় বা কেন গুম করা হয়েছিল- এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর অজানা থেকে যায়। দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে এমন কিছু মানুষের সঙ্গে যারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। দেখুন আজকের স্টার স্পেশালে।
আমি চার মাস ছিলাম চার ,মাসই আমার চোখ বাঁধা ছিলো।
গুম হওয়া ব্যক্তিকে ইন্টারগেটরের প্রশ্ন
You are man,We also man.
আপনাকে এনেছি আপনার থেকে কিছু জানার জন্য
(গুম হওয়া ব্যাক্তি আটক অন্যদের যেভাবে বোঝাত)
এসব ভূলেও করিম না, ক্রস দিয়ে দিব।
আমি বার বার ওদের বুঝিয়েছি দেখ পালানোর সুযোগ থাকলেও পালাবি না।
একসময় না এক সময় আমাদের হ্যাণ্ডওভার করবেই।
শুনছিলেন গুমহয়ে ফিরে আসা কিছু ব্যক্তিদের কথা,যে দেশে আইন আছে
বিচার ব্যবস্থা আছে তারপরও সে দেশে একনও কিছু মানুষ গুমের মতো গোপন কিছু সাজার মুখোমুখি হয়।
২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত অনন্ত ৬২৩ জন মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে জানান।কিছু মানবাধিকার সংগঠন।
CGS গত মার্চের সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায় যারা গুম হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৩০% মানুষ ফেরৎ এসছে ।
কিন্তু ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, তারা কখনও কিছু বলেনি। তাদেরকে কে নিয়েছে, কোথায় নিয়েছে সবাই চুপ এ যেন দ্বিতীয় বার হারিয়ে যাওয়া।
কেন তারা কোন কথা বলে না? কেনইবা নিখোজ থাকা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদেরকে খুজে পাই না।
এই প্রশ্নের জবাব খুজতে গিয়ে কয়েকজন গুম হয়ে ফেরৎ আশা ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলেছি নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা আমাদেরকে অডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
২০১৫ -২০২০ এই পাঁচ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময় তাদেরকে গুম করা হয়েছে ।
ভিকটিম-প্রথম ব্যক্তি
ঘরটা হবে এরকম, আমার যেটা মনে হয়েছে, আপনার সিড়ির উপর ঘর থাকে না যে একটু জায়গা থাকে
পুরো জায়গাটা কাচেঁর ছিল। বাইরে দেখা যায়, মেঝেতে পুরনো দিনের মেজাইক
টাইলস করা ছিল। তার উপর পাতলা র্যা পিং পেপার ধরনের কিছু একটা ছিল।
যে রুমটাতে আমাকে প্রথমে নিয়ে রেখেছে, ভাত খাওয়ার পর যে কখর ঘুমিয়ে গিয়েছি আর কয় ঘন্টা ঘুমিয়েছি আমি নিজেও জানিনা। আমার বিশ্বাস ভাতের মধ্যে কিছু ছিল।
ছোট্ট একটা জায়গা, ওখানে ঘুমানো যাবে না।
জায়গাটা হচ্ছে আণ্ডারগাউণ্ডের একটা রুম ।
রুমটা হচ্ছে এরকম-বাংলাদেশের পতাকার যে কালারটা, সেরকম কালারের পর্দা দিয়ে ঢাকা । আমি কিন্তু শোয়া না,আমি বসা। আমার হাত বাঁধা, পিছনে লকআপ দেয়া আর হ্যাণ্ডকাপ, আর একটা কাপড় দিয়ে চোখ বাঁধা
#কথা বলছিলেন ২০১৫ সালে গুম হওয়া এক ব্যক্তি। তার মতো একাধিক ভিকটিমদের দাবিযে তাদের পরিবারে লোকজন যখন তন্ন তন্ন করে তাদেরকে খুজছিল তখন তারা
আমাদের আসে-পাশেই এই শহরে বন্দী ছিল। হ্যাঁ ঢাকার শহরে দুটো কেন্দ্র আছে দুটো সেল আছে তাদেরকে রাখার জন্য । তারা অারও জানান দক্ষিণ অঞ্চলে এরকম আরেকটা সেল আছে । তবে এই কেন্দ্রগুলো এই সেলগুলো কিন্তু কোন অপরাধী চক্রের দ্বারা পরিচালিত না।
কোন ক্রাইম সিণ্ডকেটের না।
তাহলে কাদের কেন্দ্রগুলো!
কেন্দ্রগুলো পুরোপুরিভাবে অবৈধ করাগার কিন্তু কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে কেন্দ্রগুলো
#কেন আইনশুঙ্খলা বাহিনী কোন হদিস পাই না এই কেন্দ্রগুলোররুমটা বড়।এডজাস্ট ফ্যান আছে লাইট আছে। লাইট ছিল একদম মাথার উপরসামনে কিন্তু একদম বন্ধ।সেকেণ্ড রুমে যখন নিয়েছে এর সামনে বারান্দা।
উপর দিয়ে গ্রিল মারা এবং গ্রিলে উপর দিয়ে দেখা যায় কাঁঠাল গাছ।বৃষ্টির সময় বৃষ্টি দেখি, সূর্যের আলো ঢকে না, শুধু একটু বোঝা যায়।গাছে পাখি ডাকছে শোনা যায়। খাবার স্টিলের প্লেটে দিত।বাকি সব প্লাস্টিকের বাটিতে দিত। কখনো মেলামাইনের । তল দিয়ে দিত ।
একদিন বাথরুমে গিয়েছি। আমার টুপিটা (মুখোশ)ছোট ছিল।হঠাৎ টুপিটা পড়ে গিয়েছিল।এখন আটকে রয়েছে কিছুটা। হঠাৎ সামনে কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায় আমি বলি ক্যাপ পড়ে গিয়েছে। বলল,আরে চলেন ক্যাপ বাদ দেন।
যখন ক্যপটা পড়ে যায় তখন দেখি সামনে একটা মেয়ে কাজ করছে।
That may be kitchen
এবং আমি দেখেছি-ঘরের মধ্যে রান্নাবান্না করেনা , আমার ধারনা রান্না হচ্ছিলো
ভিকটিম- দ্বিতীয় ব্যক্তি
যাওয়ার পরে প্রথম আমার এই চার মাস পর চোখের কাপড় খুলে ফেলে।
টিনসেড একটা ঘর করেছে সেই টিনসেড ঘরের মধ্যে বড় কুকুরের খাঁচার মত,ঐ রুমগুলো খুব বেশি একটা বড় না।
ভালোভাবে ঘুমাতে পারবেন না,রুমটা একেবারে ছোট।তৃতীয় রুমে রেখেছে আমাকে হঠাৎ করে একদিন রাতে,আনুমানিক একটা দেড়টা হবে। এটা আমি আইডিয়া করে বলছি, এমন সময় আমাকে নিয়ে গেছে, অনেক গভীর রাত। মাঝে মাঝে গাড়ীর শব্দ,শো শো গাড়ীর শব্দ।এটা তিনশ ফিট ছাড়া অন্য জায়গা হবে না।
এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেছি। যাওয়ার পরে একটা টিম আসলো সেখানে আমাদেরকে হাইসে (গাড়ী)চলাফেরা করাতো। যাওয়ার পরে অন্ধকারের মধ্যে আমার চোখ বাঁধা
(আমাকে) বলেছে, দৌড় দে।ভারি কণ্ঠ।
জিজ্ঞেস করলো-চার পাঁচ জন লোকের কথা জিজ্ঞেস করলো যে এরা কোথায় সেদিন আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছি। এক তো গভীর রাত,চোখে আমি কিছুই দেখছিনা
অন্ধকার।
চোখতো বাঁধা, হাত বাঁধা। আমাকে দৌঁড় দিতে বললেও আমি দৌঁড় দেই নাই,দঁাড়িয়ে ছিলাম।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কালাম পড়চছিলাম। পরে আবার আমাকে (আগের জায়গায়) নিয়ে আসে।
চোখতো বাঁধা, হাত বাঁধা। আমাকে দৌড় দিতে বললেও আমি দৌড় দেই নাই,দঁাড়িয়ে ছিলাম।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কালাম পড়চছিলাম। পরে আবার আমাকে (আগের জায়গায়) নিয়ে আসে।
দিনের পর দিন বন্দী ছিলেন তারা এই কারাগারগুলোতে জানতে চেয়েছিলাম তাদের
#দৈনন্দিন জীবনের কথা কি করতেন, কি খেতেন, কিভাবে দিন কাটাতেন,
প্রথম দিন সকালবেলা আমি কাউণ্ট করলাম, আমি যেখানে বসা সেটা ওখানকার মেইন পয়েন্ট ছিল ওখান তেকে ১৪টা প্লেট (বনিএদর জন্য) ছুড়ে মারতো। যে জন্য আমি প্লেটগুলো গুনতে পারছি ১৪টা। মজার বিষয় হচ্ছে আরেকটা সেল ছিল যেটা ছিল লোহার গেটের সেল।
শব্দ করলে আমাদের ওয়াসরুমে নিয়ে যেত।
আর নামাজ পড়লে মারতো, মারতো এই কারনে
যে-“তুইতো ছয় মাসের মধ্যে একদিনও
মসজিদে যাস নাই,উল্টাপাল্টা কাজ করতি।
তুই এখন হুজুর হয়েছিস কেন? এজন্য আমাকে আনেক মারতো। যে চারজন ডিউটি বরতো,ওরা চারজন কন্টিনিউ ডিউটি করতো। আমাকে গ্রেফতার করেছে শীতের দিনে, ফেব্রয়ারীর শেষের দিকে। আমার সাইনাসের সমস্যা ছিল। ঐ সময় আমাকে গোসল করতে দিত ঐ লুিঙ্গ দিয়েই (শরীর) মুছতে হতো। ঐ (ভেজা)লুঙ্গিতেই থাকতে হত।
শারীরিক অসুখ-বিসুখ হলে ট্রিটমেন্ট, মেডিসিন দিত।
ঐ আটকে রাখা ,বন্দি। কারো সাথে যোগাযোগ নাই, কারো সাথে কথাও হয়না আমার।
#তারা আমাদেরকে জানান তাদের সাথে কি পরিমান অমানুষিক নির্যাতন করা হত।
সম্পন্ন্ভাবে মানবাধিকার পরিপন্থী এই অত্যাচার ।তাদেরকে এখনও পর্যন্ত তারনা দিয়ে বেড়ায়
এ যেন নির্যাতন শেষ হওয়ার পরও শেষ হয়নি।
-কারেন্টের হিট(ইলেক্ট্রিক শক) দিয়েছে। কারেন্টের হিটটা এরকম, তাদের কাছে ব্যাটারি ছিল। দুইটা ব্যাটারি।বড় ব্যাটারি আর এখানে (বানের লতিতে)ক্লিপ লাগিয়েছিল।
লাগানোর পরে ইন্টারগেশনের সময় কিছুক্ষণ পর পর ওরা আমাকে কারেন্টের হিট দিত আর বিভিন্ন প্রশ্ন করতো।
বিভিন্ন ধরনের, তারা তাদের প্রয়োজন মত তথ্য আমার কাছ থেকে জেনে নিচ্ছিল।
কারেন্টের হিট দেওয়া আগে যে তথ্যটা দিয়েছিলাম, এবার তারা একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিল আর আগের উত্তরের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছিল। আমি চার মাস ছিলাম।চার মাসই আমার চোঁখ বাধা । পাঁচ সাতদিন পর পর একটা গান ছাড়তো ইংলিশ গান আমাকে কারেন্টের হিট (ইলেক্ট্রক শক) দেওয়ার কারনে গান শনিলে মাথা ব্যাথা করতো।
আমার জন্য একটা মানষিক টর্চার। এমন ইংলিশ গান ছাড়তো আর এমন বিট আমার পাগল হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
এক দেড় ঘন্টা গান চলতো, মাঝে মাঝে আমার মাথা মনে হয় ছিড়ে যাচ্ছে।
কারেন্টের হিট দেওয়া আগে যে তথ্যটা দিয়েছিলাম, এবার তারা একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিল আর আগের উত্তরের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছিল। আমি চার মাস ছিলাম।চার মাসই আমার চোঁখ বাধা । পাঁচ সাতদিন পর পর একটা গান ছাড়তো ইংলিশ গান আমাকে কারেন্টের হিট (ইলেক্ট্রক শক) দেওয়ার কারনে গান শনিলে মাথা ব্যাথা করতো।
আমার জন্য একটা মানষিক টর্চার। এমন ইংলিশ গান ছাড়তো আর এমন বিট আমার পাগল হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
এক দেড় ঘন্টা গান চলতো, মাঝে মাঝে আমার মাথা মনে হয় ছিড়ে যাচ্ছে।
# এই ভিকটিমদেরকে যারা বন্দী করে রেখেছিল কেউ কিন্তু তাদের থেকে কখনও কোন মুক্তিপণ দাবি করে নি।
তাদের সাইলেন্স কার জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ
এ দেশে অপরাধ করে আইনের দ্বারা বিচার ব্যবস্থা মুখোমুখি হতে হয়। তাহলে গুমের মতো অপরাধের এখনও কোন বিঁচার হয়নি।
এ দেশের সকল নাগরিকের সুরক্ষার দায়িত্ব আইনশুঙ্খলা বাহিনীর।
কিন্তু গুমের মতো ঘটনা ঘটলে এর দায় নেবে কে?
সুস্থ থাকুন সাবধানে থাকুন
গুমের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হোউন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন