পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা! মৃত্যুর আগে শুধু বন্ধুদের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার জন্য উইল করা নয়, মৃত্যুর পর কোথায় কোন জায়গায় তাঁদের কবর দেওয়া হবে, সেটাও উইলে লিখেছেন ঋষিকেশ ও রিয়া। কিনে রেখেছেন মৃত্যুর পরে কবর দেওয়ার জায়গাও। দম্পতির এমন কাণ্ডে হতবাক আত্মীয়, বন্ধু থেকে পুলিশও। কলতাকার বাঁশদ্রোণীতে দম্পতির আত্মহত্যার ঘটনার পর থেকে যেন শুধুই নাটকীয়তা!
ঋষিকেশ ও রিয়ার উইলে স্পষ্ট লেখা আছে, কোথায় তাঁদের কবর দেওয়া হবে।
এমনকি এটাও লেখা, তাঁদের কবর দেওয়ার জন্য জায়গাও তাঁরা কিনে রেখেছেন। দম্পতির কাণ্ডে হতভম্ব সবাই। কেউ এতটা পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করতে পারে! বিশ্বাসই করতে পারছেন না কেউ। হতবাক পুলিশ কর্তারাও।
কী লেখা আছে উইলে?
উইলে লেখা, মল্লিকবাজারে যেখানে ঋষিকেশকে কবর দেওয়া হবে, সেখানে জায়গা আগে থেকেই ঠিক করা আছে। মল্লিকবাজার খ্রিস্টান সিমেট্রির পাট্টা নম্বর ১২৫২৪৭/১৭০ রেফারেন্স নম্বর ১১৩০২/২৪। রিয়ার ক্ষেত্রে ওই একই মল্লিকবাজার সিমেট্রি। রিয়ার পাট্টা নম্বর ১২৫৬৫৯/১৭৪ রেফারেন্স নম্বর ৮৪৮/০৯। পুলিশের হাতে দুটি উইিই এসে পৌঁছেছে। একটা ঋষিকেশের। অন্যটা রিয়ার। দুজনে পৃথক উইল করেন। হাইকোর্টের একজন অ্যাডভোকেটকে দিয়ে করানো হয় উইল দুটি। দুজনের উইলেই তাঁদের বন্ধু তাপস দাসের কথা উল্লেখ রয়েছে।
তাপস দাস জানান, ‘জায়গা কবে কিনেছিল সেটা কিছু বলেনি। এমনকি কফিনটাও কিনে রেখেছিল। জায়গার দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা তো হবেই। পাশাপাশি দুটি প্লট কেনা আছে। দুটি বেদি করার মতো। যিনি কফিন বাক্স বানাবেন, তাঁকে পুরো টাকা দেওয়া আছে। প্রায় দিনই ওরা ওই কবরস্থানে যেত। ওখানেই ঋষিকেশ পালের দিদির সমাধিও রয়েছে। ’
যুগলের এক বন্ধুর কথায়, কবর দেওয়ার জন্য আগে থেকেই যে জায়গা কিনে রাখা হয়েছিল, সেটা বন্ধুরা কেউই জানতেন না। এমনকি কফিন কেনার টাকাও আগে থেকেই দেওয়া ছিল, সেটাও তাঁরা আসার পরই জানতে পারেন। বাঁশদ্রোণীর ঘটনা সবচেয়ে বেশি পুলিশকে ভাবাচ্ছে, মৃত্যুর পর যেখানে তাঁদের কবর দেওয়া হবে, সেই জায়গাও দুজনে আগে থেকেই কিনে রেখেছিলেন। এর আগে শহরে কেউ এভাবে এত পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করেছে বলে মনে করতে পারছেন না খোদ পুলিশ কর্তারাও।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুরের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ঋষিকেশ পাল ও রিয়া সরকারের দেহ। ঘরে তখন এসি চলছিল। খাটের ওপর চাদর চাপা দিয়ে ‘শুয়ে ছিলেন’ দম্পতি। ঠিক যেন ঘুমাচ্ছেন! এর পরই তদন্তে উঠে আসে মৃত্যুর আগে যুগলের উইল করে রেখে যাওয়ার কথা। সামনে আসে, সেই উইলে মৃতদেহ বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। পাশাপাশি, পুলিশকে মেইল এবং বন্ধু ও পরিবারকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে আত্মহত্যা করতে যাওয়ার কথা জানিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও।
সূত্র : জি২৪
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন