ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর জন্ম নেয়া শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে বলে বৃহস্পতিবার এক রায়ে বলা হয়েছে।
ওই মামলায় রাজু আহমেদ নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। জরিমানা টাকা অনাদায়ে আরো ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে আসামিকে। বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ দণ্ড দেন।
ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র নিবে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায়ের পর আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামি পূর্বপরিকল্পনা মাফিক, সুস্থির পরিকল্পনায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ভিকটিমকে বেছে নিয়েছে। আসামির করা অপরাধ লজ্জাজনক, ভয়াবহ। রায়ে আরো বলা হয়, আসামির উক্ত অপরাধে ভুক্তভোগীর গর্ভে যে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে আসামি সেই সন্তানের জৈবিক বাবা। অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় আসামির বয়স ৩০ বছর। আসামি মানসিকভাবে অনগ্রসর নতুবা ১২ বছর বয়সী শিশুর সঙ্গে কোনোভাবে শারীরিক সম্পর্ক করত না। ভিকটিম পরিবার ছেলে সন্তানটির তত্ত্বাবধান দাবি করেনি। আইন শিশুকে পিতৃ পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু শিশুর বাবা-মার যত্ন ভালোবাসা দিতে অক্ষম।
রায়ে বলা হয়, আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলে নবজাতক শিশুটি চিরতরে উক্ত ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে, যে কারণে আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া সমীচীন হবে না মর্মে প্রতিভাত হয়। এমতাবস্থায় আসামি রাজু
আহমেদকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া এলা। তা ছাড়া নবজাতক শিশুর ভরণপোষণের ব্যয় তার বয়স ২১ বছর পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র বহন করবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রী সবুজবাগ থানাধীন উত্তর মাদারটেক এলাকার একটি বাসায় পরিবারসহ ভাড়া থাকত। তার পরিবারের অনুপস্থিতির সুযোগে আসামি হাত-পা ও মুখ বেঁধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে আসামি ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় এসে তার পরিবারকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। ওই ছাত্রীর শারীরিক গঠনের পরিবর্তন দেখা দিলে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, ওই ছাত্রী আট মাসের গর্ভবতী। পরবর্তীতে ছাত্রীর মা সবুজবাগ থানায় ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তৃপ্তি খান আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, আদালত ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আদালত ১০ জনের সাক্ষ্য শেষে এ রায় দেয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন