হুটহাট গুলি করতে সতর্কতা অবলম্বনসহ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
সূত্র জানায়, দুর্গাপূজায় সহিংসতার ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। হামলার সঙ্গে সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, এসব ঘটনায় পুলিশের কোনো বাড়াবাড়ি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ সদর দপ্তর।
ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব নিয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ দেশে ফিরে মঙ্গলবার আইজিপি বেনজীর আহমেদ রেঞ্জ ডিআইজি, সবকটি জেলার পুলিশ সুপার, মেট্রোর পুলিশ কমিশনার ও পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন।
সূত্র জানায়, নির্দেশনার মধ্যে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র ব্যবহারে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। প্রথম অবস্থায় কোনোভাবে সরাসরি গুলি না ছুড়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার।
এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও জানমালের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি সাপেক্ষে তবেই গুলি ছোড়ার নির্দেশনা রয়েছে। হুটহাট করে গুলি করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের আরো প্রশিক্ষণ দিতেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি কুমিল্লা ইস্যুতে দায়ের হওয়া সব মামলা দ্রুত নির্ভুল তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায়ও আনার তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ১০ দিনের বিদেশ সফর শেষে গত ২৫ অক্টোবর রাতে দেশে ফেরেন আইজিপি। এরপর ২৬ তারিখ দুপুরে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত করা হয় পুলিশের সব ইউনিটের প্রধান, রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার ও জেলার এসপিদের।
সেখানে আলোচনার প্রথমে কুমিল্লায় কোরআন শরীফ অবমাননার বিষয় নিয়ে দেশে সৃষ্ট ঝামেলার বিষয়টি ওঠে আসে। এ বিষয়ে আইজিপি মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দিয়ে নির্ভুল তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার তাগাদা দেন।
একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সরকার বিরোধী কোনো শক্তি যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে এ বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে বিষয়ে সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের আলাদা দিক- নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কুমিল্লা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন থানায় এই পর্যন্ত ১২৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার অন্তত ৭০০ ব্যক্তির মধ্যে যারা রিমান্ডে আছেন তারা কী ধরনের তথ্য দিয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চান আইজিপি।
এই সময় জেলার পুলিশ সুপাররা তাদের বক্তব্য পেশ করেন। একই সাথে উসকানিদাতা ও নেপথ্যের কারিগরদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেন। আইজিপি দায়ীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। তবে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে হয়রানি করতে নিষেধ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েকটি জেলায় ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপাররা আইজিপির কাছে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন। এই সময় আইজিপি আরো সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারাকেও নিজেদের ব্যর্থতা বলে অবহিত করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন