বরফের নাম শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে এক শ্বেত-শুভ্র অবয়ব। বরফের রঙ সাদা ছাড়া অন্য কিছু হবে, এটা ভাবাটা বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, বরফ শুধু সাদাই নয়, হতে পারে টকটকে লাল। আর এই লাল বরফের দেখা পেতে হলে যেতে হবে ‘ফ্রেঞ্চ আল্পস’ এ। আল্পস পর্বতমালার ফ্রান্স অধ্যুষিত অংশের এই রক্তলাল বরফ অনেক প্রকৃতিবিজ্ঞানীকেই আকর্ষণ করছে।
আল্পস পর্বতমালায় গেলেই যে এই অদ্ভুত রঙয়ের বরফের দেখা পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। এই রক্তলাল, ক্ষেত্রবিশেষে হালকা গোলাপী রঙের বরফের দেখা পেতে বিজ্ঞানীদের যেতে হবে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪শ’ মিটার উপরে।
এই লাল রঙের বরফের পেছনে রয়েছে এক ধরনের লাল শৈবাল। শৈবালের রঙ মূলত সবুজ হলেও আল্পসের পারিপার্শ্বিকতা আর দীর্ঘ সময়ের সৌর বিকিরণের কারণে এই শৈবাল রঙ পাল্টে লাল বর্ণ ধারণ করে। হঠাৎ করে এই লাল বরফ নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও এর খোঁজ পাওয়া গেছে আরও প্রায় ২০০ বছর আগে ১৮১৯ সালে। সেই সময় আর্কটিকে এক বৈজ্ঞানিক অভিযানে এই রহস্যময় লাল বরফের খোঁজ পাওয়া যায়। এর রহস্য এখন অজানা রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে, চলছে নানা ধরনের গবেষণা।
এই লাল বরফের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর যোগসূত্র আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। জার্মানির পোস্টডামে অবস্থিত রিসার্চ সেন্টারের ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলে কার্ব-ডাই-অক্সাইডের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা, গলছে বরফ। আর যখনই বরফ গলে পানি হচ্ছে, সেখানে দেখা দিচ্ছে এই লাল শৈবাল। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই শৈবাল যতই বাড়বে, ততই তা প্রকৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে, এই লাল শৈবাল বরফের উপরিভাগকে আরও বেশি গাঢ় করে তোলে, ফলশ্রুতিতে বরফ যে পরিমাণ তাপ বিকিরণ করে তার পরিমাণ কমে আসবে। অন্যদিকে, এই সূর্যের তাপ ধরে রাখছে লাল শৈবাল, যা বরফকে আরও বেশি পরিমাণে গলতে বাধ্য করছে।
এই লাল বরফ শুধু যে আল্পস পর্বতমালাতেই দেখতে পাওয়া যায় তা নয়, এই বরফের দেখা মিলছে অ্যান্টার্কটিকা, হিমালয় এমনকি আর্কটিকে। এই রক্তলাল বরফ দেখতে অনিন্দ্যসুন্দর হলেও এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে বেশ ভালো রকমই প্রভাব পড়ছে। তবে অনেক বিজ্ঞানীই বর্তমানে এই বরফ নিয়ে কাজ করছে, আশা করা যায় খুব দ্রুতই এর রহস্যের সমাধান হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন