শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রায় ১০ টন স্বর্ণসহ স্বর্ণালঙ্কার এসেছে। এই স্বর্ণের বেশির ভাগই এনেছেন বিদেশ ফেরত যাত্রীরা। এই সময়ে লাইসেন্সধারী আমদানিকারকরা কোনো স্বর্ণই আমদানি করেননি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে, আমদানিকারকরাই বিদেশ ফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে এই স্বর্ণ এনেছেন। এটি তাদের নতুন কৌশল। তবে বৈধপথে স্বর্ণ আসায় রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
শুল্ক-কর দিয়ে স্বর্ণ আনা হলেও বাজারমূল্যের চেয়ে গড়ে ১০ হাজার টাকা দাম কম পড়ে। আবার স্বর্ণবারে খাদ মেশানোর পর মূল্য সংযোজন কর আরও বেশি হয়। এ কারণে যাত্রীদের মাধ্যমে এক-দুটি করে স্বর্ণের বার নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে স্বর্ণের বার আনার ক্ষেত্রে শুল্ক-কর বাবদ বাড়তি খরচ হলেও ঝুঁকি অনেক কম। এ জন্য এখন যাত্রীদের মাধ্যমে বৈধভাবে স্বর্ণ আনার প্রবণতা বাড়ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বৈধপথে দুইভাবে স্বর্ণ আমদানি করা যায়। ২০১৮ সালের স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে স্বর্ণ আমদানি করতে পারে। আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় এক যাত্রী বিদেশ থেকে ফেরার সময় ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার নিয়ে আসতে পারেন। বৈধভাবে স্বর্ণের বার আমদানির জন্য শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়। ব্যাগেজ রুলসের আওতায় প্রতিভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক-কর ২ হাজার টাকা।
ঢাকা কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শাহজালাল হয়ে ৯ হাজার ২৭০ কেজি স্বর্ণালঙ্কার আমদানি হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩ হাজার ৪৩২ কেজি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬৩৪ কেজি, মার্চে ১ হাজার ৬৩৪ কেজি, এপ্রিলে ৯৯৬ কেজি, মে মাসে ১ হাজার ৭২৭ কেজি এবং জুনে ১ হাজার ৯৪৯ কেজি স্বর্ণ এসেছে। এই সময়ে ৩১২ কেজি স্বর্ণ জব্দও করে কাস্টম। সম্প্রতি ১৪ কেজি তরল স্বর্ণসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ। তারা তুরস্ক থেকে তার্কিশ এয়ারলাইন্সে ঢাকায় আসেন।
কাস্টমস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার মধ্যেও কয়েকটি চাটার্ড ফ্লাইট চালু ছিল। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাস দেশের আকাশপথ উন্মুক্ত ছিল। এই সময়ে প্রবাসীদের বড় একটি অংশ স্বর্ণ নিয়ে আসেন। বেশির ভাগ দুবাই, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান থেকে ট্রানজিট বা সরাসরি ফ্লাইটে এসেছে।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কোনো যাত্রী সঙ্গে করে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার আনলে শুল্ক দরকার হয় না। তবে ব্যাগেজ রুলসে কোনো যাত্রী সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম স্বর্ণবার আনতে পারেন। একেকটি স্বর্ণবারের ওজন ১১৬ গ্রাম। সে অনুযায়ী এক যাত্রী দুটি স্বর্ণবার অর্থাৎ ২৩৪ গ্রাম স্বর্ণবার আনছেন। প্রতিবার স্বর্ণের জন্য সরকারকে ২০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। তবে ২৩৪ গ্রামের বেশি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে লাইসেন্সধারী আমদানিকারকরা আনতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বৈধভাবে ব্যাগেজ রুলসে স্বর্ণ আসায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। এতে চোরাই স্বর্ণ আমদানি দিন দিন বন্ধ হচ্ছে।
তবে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি দামের কারণে বর্তমানে দেশে সোনার চাহিদা খুব কম। বেশি দাম পাওয়ায় কেনার চেয়ে অনেকের মধ্যে পুরনো স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তা হলে বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে আসা এত সোনা যাচ্ছে কোথায়- এমন সন্দেহ দেখা দিয়েছে তাদের মনেও। কর্তৃপক্ষের ধারণা, বৈধপথে আসা স্বর্ণগুলো অবৈধপথে প্রতিবেশী দেশে চলে যাচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮৪ কেজি স্বর্ণবার জব্দ হয়। ২০১৬-১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬২৩ কেজি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন