দেশবাসী আজ উদযাপন করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঈদের এ দিনে মোটাদাগে তিন ধরনের মানুষের দেখা মিলেছে। প্রথমত, একটা শ্রেণি ঈদ উদযাপন করছেন নতুন জামাকাপড় পরে ঈদের নামাজ আদায়, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে গল্পগুজব, বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির মাধ্যমে। দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষগুলো রিকশা চালিয়েছেন, গণপরিবহন চালিয়েছেন ও দোকানপাট খোলা রেখেছেন বা ঈদের দিনেও পরিশ্রম করেছেন। তৃতীয় শ্রেণির মানুষগুলো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কাছে হাত পেতেছেন বা মসজিদের দরজায় দরজায় হাত পেতে বসে ছিলেন। অথচ এই তিন শ্রেণির মানুষের কাছেই আজ ঈদ!
তেমনি আজকে ঈদ ৫০ বছর বয়সী আব্দুল কাদেরেরও। আজ দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালে একটা শার্ট ও লুঙ্গি পরে মলিন অবস্থায় বসেছিলেন তিনি। জানালেন, মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই উত্তরবঙ্গ লাইনের পরিবহনের সঙ্গে আছেন তিনি। আপাতত তিনি কোনো কাজ করছেন না।
আবদুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানসিক, শারীরিক অবস্থা তো সবসময় একরকম থাকে না। রক্ত, গোস্ত, কিডনি, ফুসফুসওয়ালা মানুষ তো। মানুষ সবসময় তো একরকম সার্ভিস দিতে পারে না। আমাদের সময় তো বগুড়ায় টয়লেটের চাপ দিলে দিনাজপুর গিয়ে করতে হয়েছে। এখন সেগুলোর প্রভাব পড়ছে।’
ঈদের দিন কেন এখানে এভাবে বসে আছেন, তা জানালেন না তিনি। ঈদের দিন ভালো কিছু খাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও তা তার ভাগ্যে জোটেনি। কাদের বলেন, ‘আজ ঈদ। কিন্তু সকালবেলা গরুর হাটে গেছি, সেখানে আলুভর্তা দিয়ে ভাত খাইছি। এ ছাড়া আর কিছু খাই নাই।’
গাবতলী বাস টার্মিনালের বিপরীত পাশের ফুটপাত দিয়ে টেকনিক্যালের দিকে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধা। এক হাতে তার একটি বস্তা, আরেক হাতে একটি বিস্কুট। তার সঙ্গে কথা বলতে চাই জানাতেই পাশ ঘুরে বিস্কুটটা খেয়ে নেন। পাশাপাশি বিস্কুটের কাগজ দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করেন তিনি। তারপর নাম না জানিয়ে বৃদ্ধার উত্তর, তার পরিবান-পরিজন নেই। থাকেন ফুটপাতে। ঈদে অনেকে জাকাতের টাকা দেবে, তাই হেটে হেটে টেকনিক্যালের দিকে যাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতিদিন যে বোতল কুড়িয়ে যে ব্যাগে রাখেন, তাও সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছেন।
ঈদের দিন কী কী করলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ঈদের দিন কী করমু (করবো)। থাকি এখানে-সেখানে। মাইনষে (মানুষে) ঈদে কী করে কইতে হারি (বলতে পারি) না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ রাইতে (রাতে) পুলিশ বিরিয়ানি দিল, সেমাই দিল। সেগুলা খাইলাম।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন