‘এখন ভালো আছি। কোনো ধরনের সাপোর্ট ছাড়াই হাঁটতে পারছি। যেখানে অপারেশন হয়েছিল সেখানে কোনো সমস্যা অনুভব করছি না।’ কুশলাদির প্রশ্নের জবাবে বলছিলেন ভাষা সংগ্রামী, রবীন্দ্র-গবেষক, প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক।
ঈদের দিন সকালে মুঠোফোনে আলাপ হলো তাঁর সঙ্গে।
গত ১৮ মার্চ রাতে নিজ বাসায় পড়ে গিয়ে তার কোমরের হাড় নড়ে যায়। মাথাও সামান্য ফেটে যায়। ওই রাতেই তাকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন পর সেখানে তার কোমরে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি বাসায় চলে আসেন। বাসাতে থেকেই প্রতিদিন ফিজিওথেরাপি নিতে হচ্ছে তাঁকে। তবে তিনি জানালেন, এখন কোথাও ভর না দিয়েই একা একাই হাঁটতে পারছেন।
শুক্রবার মুঠোফোন আলাপের শুরুতেই নিজেই ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানালেন আহমদ রফিক। বললেন, ‘ভালোই আছি। ফিজিওথেরাপি চলছে। দুজন অ্যাটেনডেন্ট ছিল। এখন অনেকটা ভালো অনুভব করায় একজনকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। কালাম (ব্যক্তিগত সহকারী) দিনে দেখাশোনা করে। রাতের জন্য একজন আছেন।’
নিজের মনোবলের কারণে দ্রুত সেরে উঠছেন বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই রবীন্দ্রগবেষক। বললেন, ‘নিজের দিকে খেয়াল রাখছি বলেই ভালো আছি। অনেকেই বলেন, আপনি এতদ্রুত কোনো ধরনের সাপোর্ট ছাড়া হাঁটতে পারবেন, বলে আমরা মনে করিনি। আদৌ দাড়াতে পারব কিনা তা নিয়েও সন্দেহ অনেকের।’
হাসতে হাসতে বললেন, ‘সকালে মিষ্টান্ন ভক্ষণ করেছি। সেমাই। চিরাচরিত ঈদের মিষ্টি।’
কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আসলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটাই বড় কথা। এই তো কয়েকদিন ফিজিওথেরাপি করল সানোয়ার (অ্যাটেনডেন্ট)। মাস দুয়েক হবে। এর মধ্যে তার মনে হলো স্যারকে একটা ফোন দেওয়া দরকার। আজ সকালেই রাজশাহীতে তার বাড়ি পৌঁছে। পৌঁছে ফোন করেছিল। কেমন আছি জানতে চাইল। ঈদ উপলক্ষে ফোন দিল আরকি। মানুষে মানুষে এই সম্পর্কটা খুব জরুরি। যেটা রবীন্দ্রনাথ নানাভাবে মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে চেষ্টা করেছেন। আমাদের তো সেই বোধ খুব একটা নেই। সমস্যা হলো এখানে।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যাওয়া বিশিষ্টজনদের প্রসঙ্গ উঠতেই কেমন যেন বিষণ্ন শোনাল তাঁর কণ্ঠ। বললেন, ‘করোনা বিশেষ করে দামি লোকগুলোকে নিয়ে চলে গেল। হঠাৎ করেই। আমাদের জন্য, সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর হলো আরকি।’
ঈদের এই আনন্দমুহূর্তে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুললেন না জাতীয় জীবনের ৯২ বছর বয়সী এই মহীরুহ। বললেন, ‘সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। তারা সবাই যাতে ভালো থাকে। যথাযথভাবে যেন ভালো থাকে।’
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার শাহবাজপুর গ্রামে জন্ম নেন আহমদ রফিক।
তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘নির্বাসিত নায়ক’, ‘বাউল মাটিতে মন’, ‘রক্তের নিসর্গে’, ‘পড়ন্ত রোদ্দুরে’, ‘ভালোবাসা ভালো নেই’, ‘নির্বাচিত কবিতা’।
প্রবন্ধ-গবেষণাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’, ‘নজরুল কাব্যে জীবনসাধনা’ ‘আরেক কালান্তর’, ‘বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি’, ‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও বাংলাদেশ’, ‘একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস’, ‘ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য’, ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু জিজ্ঞাসা’। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি তিনি ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা ‘নাগরিক’ সম্পাদনা করেছেন।
স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৫ সালে একুশে পদক, ২০০১ সালে বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ১৯৭৯ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ১৯৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ‘রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য’ উপাধি পান।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন