তিনি সুনামের স্থলে বদনাম কামিয়ে সড়ে দাঁড়ালেন। তাও স্বেচ্ছায় নয়। একেবারে দরকষাকষির কায়দায়। নিয়োগ বাণিজ্যের নানান ফিরিস্থি ক্রমেই বেরিয়ে আসছে। শিক্ষক পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন শিক্ষকের স্ত্রী ও ছেলে। শিক্ষক পরিবারের পাঁচজন নিয়োগ পেলেও জানে না বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে ভিসি আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের নিয়োগ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে বিদায়ের আগ মুহূর্তে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তবুও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নানা বির্তকের মাঝে ১৩৭ জনকে অ্যাডহকে নিয়োগ দিয়েছেন বিদায়ী ভিসি প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান। বুধবার (৫ মে) স্বাক্ষরিত নিয়োগ তালিকা থেকে বিষয়টি জানা গেছে। নিয়োগ সংক্রান্ত তালিকায় থেকে জানা গেছে, শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ১৯ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষক পদে ৯ জন:
শিক্ষক পদে ৯ জনের মধ্যে একজনকে সহযোগী অধ্যাপক ও আটজন প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রভাষক পদে আটজন হলেন-ফিশারিজ বিভাগে তাসকিন পারভেজ, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ইন্দনিল মিশ্র, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সে ড. শাহরিয়ার মাহবুব, সংগীত বিভাগে ঋত্বিক মাহমুদ, ইতিহাস বিভাগে কামরুজ্জামান, আরবি বিভাগে ড. এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগে আফজাল হোসেন এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগে আসাদুজ্জামান। এছাড়া সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক (আইটি) হিসেবে ড. সাবিহা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ ফিরিস্থির একাংশ
কর্মকর্তা পদে ১৯ জন:
সেকশন অফিসার পদে আটজন, সহকারী রেজিস্ট্রার পদে দুজন, সহকারী প্রকৌশলী পদে দুজন, আবাসিক শিক্ষিকা পদে পাঁচজন ও দুইজন শরীরচর্চার শিক্ষক।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জন:
সিনিয়র সহকারী পদে একজন, উচ্চমান সহকারী পদে ৩০ জন, নিম্নমান সহকারী পদে ৪৩ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে দুজন, তত্ত্বাবধায়িকা পদে তিনজন, গার্ড সুপারভাইজার পদে একজন, জুনিয়র গ্রন্থাগারিক পদে একজন, সহকারী স্টোরকিপার পদে দুজন, হিসাব সহকারী পদে একজন ও পেশ ইমাম পদে একজন।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ২৪ জন:
এরমধ্যে নয়জন অফিস সহায়ক, আটজন নিরাপত্তা প্রহরী, দুজন আয়া, বাস কন্ডাক্টর দুজন, কাঠমিস্ত্রি এবং গবেষণাগার পরিচারক একজন রয়েছেন। শেষ সময়ের এই নিয়োগে অধ্যাপক আবদুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন সাংবাদিকের নিয়োগপত্রেও সই করেছেন। তাদের মধ্যে দুজন সাংবাদিক নেতা।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) নির্বাহী সদস্য আনিসুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি, রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য। বর্তমানে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে রাজশাহীতে কর্মরত।
বৃহস্পতিবার ভিসির সইয়ে নিয়োগ পেয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন মেহেদী হাসান শ্যামল নামের আরেক সাংবাদিক নেতা। তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সেকশন অফিসার হিসেবে। তিনি রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) সভাপতি। কাজ করেন মোহনা টেলিভিশনে।
সেকশন অফিসার হিসেবে আরও নিয়োগ পেয়েছেন সাংবাদিক এনায়েত করিম ও আমজাদ হোসেন শিমুল। এনায়েত করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি উত্তরা প্রতিদিন নামের একটি স্থানীয় দৈনিকে কাজ করেন। আমজাদ হোসেন শিমুল রাবিসাস-এর সাবেক সহসভাপতি। বর্তমানে তিনি রাজশাহীতে দৈনিক আমাদের সময়ে কাজ করেন।
এর বাইরে অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর নাম এই নিয়োগ তালিকায় রয়েছে। যারা পরিচিত মুখ চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, আতিকুর রহমান তমাল, সাবেক ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর মোঃ সালেহ, বর্তমান সহ-সভাপতি মাহফুজ আলামিন, সুরন্জিত প্রসাদ দীপ্ত, ফারুক হোসেন,ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা, ফিরোজ ও ডিল।
তবে ভিসির অবৈধ নিয়োগের বৈধতার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।এতদসংক্রান্ত বিষয়ে নিয়োগ কার্যক্রমে অনিয়ম হয়েছে কি না,তা তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৬ মে) সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত এক তথ্যবিবরণীতে এ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে তদন্ত করা হবে। তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকির হোসেন আখন্দ এবং ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নিয়োগের আরেক ফিরিস্থির একাংশ
এর পূর্বে,বৃহস্পতিবার (০৬ মে) দুপুরে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে মহানগর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানরত সাবেক ও বর্তমান কমিটির ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর পরই ক্যাম্পাসের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখে নানা অভিযোগ আর বিতর্কের বোঝা মাথায় নিয়ে চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তিনি।
ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, আপনারা ভালো থাকবেন। ভিসি থাকাকালীন আপনারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ্যাডহকে নিয়োগের বিষয়ে তিনি কেন মন্তব্য করেননি,শুধু বললেন আপনারা ভালো থাকবেন দোয়া করবেন। ভিসি প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ায় উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-ভিসি ড. আনন্দ কুমার সাহা।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন