ছবিতে এসআই আকবর ও ইনসেটে রায়হান
ছিনতাইয়ের অভিযোগে ধরে এনে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনেই রায়হান আহমদের মৃত্যু হয়েছে, এমন প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বুধবার (০৫ মে) সকালে রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় পিবিআই।
অভিযোগপত্রে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে মোট ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে ৫ জনই পুলিশ সদস্য।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) খালেদ-উজ জামান জানিয়েছেন, তদন্তে রায়হান আহমদকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানোর প্রমাণ মিলেছে। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ বহিষ্কৃত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেকে এলাহি, পুলিশের কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস নির্যাতনে অংশ নেন বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
তিনি জানান, নির্যাতনের আলামত নষ্ট ও এসআই আকবরকে পালাতে সহায়তা করেন বহিষ্কৃত এএসআই হাসান উদ্দিন ও কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। অভিযোগপত্রে এ ৬ জনকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গেল বছরের ১১ অক্টোবর রাতে নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে তুলে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১২ অক্টোবর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রায়হানের মরদেহ পাওয়া যায়।
এসপি খালেদ-উজ জামান জানান, সাইদুল শেখ নামের এক ব্যক্তির করা ছিনতাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই রাতে রায়হানকে কাষ্টঘর থেকে ধরে এনেছিল এসআই আকবর ও তার সহযোগীরা। ফাঁড়িতে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরদিন ১২ অক্টোবর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রায়হানের মরদেহ পাওয়া যায়।
এসপি আরও জানান, সাইদুল ইয়াবা সংগ্রহ করতে কাষ্টঘর এলাকায় গিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রয়েছে। ইয়াবা সংগ্রহের সময় সেখানে রায়হানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর তার অভিযোগেই রায়হানকে ফাঁড়িতে ধরে আনে পুলিশ।
ঘটনার পর রায়হানের মা সালমা বেগম শুরু থেকেই ‘অন্য কারও ইন্ধনে পূবপরিকল্পনার জেরে’ রায়হানকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে পুলিশ হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন।
তবে এসপি খালেদ-উজ জামান জানান, দীর্ঘ তদন্ত, সবার সাক্ষ্যগ্রহণ এবং রায়হান, আকবরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফোনালাপ সংগ্রহ করে ‘পূর্ববিরোর্ধের’ কোনও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
১৯৬২ পৃষ্ঠার অভিযোপত্রে ৬৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে জানিয়ে এসপি আরও বলেন, এর মধ্যে ১০ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। পুলিশ সদস্য রয়েছেন ৭ জন।
রায়হানের পরিবার এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়ার দীর্ঘসূত্রিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
এসপি জানান, অভিযোগপত্রে যেন কোনও খুঁত না থাকে, তদন্ত নিয়ে যেন প্রশ্ন না উঠে সেজন্য তদন্তে সবগুলো দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
তিনি জানান, অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২, ৫০১ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(২), ১৫(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একদিন পরই ১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তিন্নি।
রায়হানের মৃত্যুর ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এই ৬ জনই এখন কারাগারে রয়েছেন।
তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস।
এর আগে তাদের সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবরকে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়। রায়হানের মৃত্যুর পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান বলে জানা যায়।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন