কামরুল হাসান মামুন, ফেসবুক থেকে,

দেশে যে চোর, প্রতারক, জালিয়াত, দালাল, ঘুষখোর, মিথ্যুক ইত্যাদির বাম্পার ফলন হচ্ছে এর একটি সম্ভাব্য বড় কারণ ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। আমরা যদি ১৯৯০ সালকে গণতন্ত্রের বিগ ব্যাঙ হিসাবে অভিহিত করি তাহলে তখন থেকেই এই ফলনের শুরু। সেইটা বাড়তে বাড়তে এখনকার অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের নির্বাচন সেই কখনোই ত্রুটিমুক্ত ছিল না। তবে দিন যতই যাচ্ছে ত্রুটির মাত্রা যেন এক্সপোনেনশিয়াললি বাড়ছে। একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন করতে প্রশাসনের নানা স্তরের মানুষের সহযোগিতা লাগে। সেইটা করতে গিয়ে প্রশাসনের মানুষদের নানা অন্যায় কাজে হয় নিজে জড়িত হতে হয় নাহয় অন্যকে অন্যায় কাজটি করতে সহযোগিতা করতে হয়। তারপর আবার নির্বাচনের পর এই নির্বাচনকে ডিফেন্ড করতে দল থেকে শুরু করে দলীয় আঁতেলদের নানাভাবে মিথ্যা কথা বলতে হয়। এইসব অন্যায় ও মিথ্যার একটা বিনিময় মূল্য আছে। যারা সরকারে থাকে তাদের সেই বিনিময় মূল্যও চুকাতে হয়। এইভাবে অনৈতিকভাবে একে অপরের উপকার করতে গিয়ে এখন নৈতিকতা, সততা, ভদ্রতা সমাজ থেকে বিলুপ্ত প্রায়।

যেই মানুষ এখন যত বেশি মিথ্যে বলতে পারে, যত বেশি প্রতারণা করতে পারে, জালিয়াতি করতে পারে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণখেলাপি হতে পারে, ঘুষ খেতে পারে, অন্যের জমি দখল করতে পারে তারাই যেন সুখী, তারাই যেন ভালো থাকে। কি আশ্চর্য একটি সমাজ গড়েছি যে আমরা এখন কোন কাজই শংকামুক্ত হয়ে করতে পারিনা। বাজারে সবজি থেকে শুরু করে কম্পিউটার বা যেকোন পণ্য কিনতে গিয়ে সর্বদা শংকায় থাকতে হয় ঠকছি কিনা। পদে পদে প্রতারিত হওয়ার ভয়ে থাকি।

কল্পনা করা যায় শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে না পড়িয়ে বা কম পড়ায় যেন শিক্ষার্থীরা শ্রেণী কক্ষের বাহিরে টাকার বিনিময়ে তার কাছে পড়তে আসে। সেখানে এমন কিছু পড়াবে এবং পরীক্ষায় দিবে যেন যারা তার কাছে না পড়ে তারা পরীক্ষায় ওই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে পড়ানো ও গবেষণা বাদ দিয়ে কেবল নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য হয় রাজনীতিতে মত্ত থাকে না হয় অন্যত্র কিছু করে টাকা কমানোর ধান্দাবাজিতে মত্ত থাকে। রোগী ডাক্তারের কাছে গেলে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে দিবে এবং বলে দিবে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাবে। সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পার্সেন্টেজ নিবে। শুধু তাই না তারা নির্দিষ্ট একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ঔষধ prescribe করবে আর সেই কোম্পানি থেকে আনারকম সুবিধা নিবে। ইঞ্জিনিয়ারদের কথা যত কম বলা যায় ততই বেটার। পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নমানের রাস্তা বাংলাদেশে হয় কিন্তু পার কিলোমিটার রাস্তা বানাতে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ খরচ হয়। আর আমলারা? সেটাতো আপনারাই ভালো জানেন। কিভাবে তারা দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এদের দুর্নীতির কোন সীমা নাই। রিপোর্ট বের হয়েছে এরাই নাকি সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার করে বেগমপাড়া আর সেকেন্ড হোম বানায়। রাজনীতিবিদরাতো সমাজ গঠনের স্থপতি। আজকের এই পচা সমাজই প্রমাণ করে তারা কেমন।

কোন আশা আছে?