রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তাবরানি ১৯২৯)। নামাজ এমন একটি ইবাদত’ যা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও নামাজ হতে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর নামাজের গুরুত্ব আলাদা। হাদিসে ফজরের নামাজের ব্যাপারে এত বেশি গুরুত্ব এসেছে যে, যদি একজন মুমিন তার মধ্য থেকে মাত্র একটিও মনে রাখে তাহলেও এক্ষেত্রে তার গাফলতি অনায়াসে দূর হয়ে যাবে। নব প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সে ফজরের জামাতে শরিক হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ব্রতী হবে ইনশাআল্লাহ।
হযরত উসমান ইবন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ঈশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। (মুসলিম ১০৯৬)
হযরত যুনদব ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সুফইয়ান আলবাজালি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। (তিরমিযি ২১৮৪)
হযরত বুরাইদা আলআসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা আঁধারে (ফজর নামাযে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ ৪৯৪)
হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)
হযরত আনাস ইবন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ান্তে বসে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত নফল নামাজ (ইশরাক) আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে। ‘পরিপূর্ণ’ এ শব্দটি তিনি তিনবার বলেছেন। (তিরমিযি ৫৮৬)
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) নাজদের দিকে এক অভিযানে একটি সেনাদল পাঠান। তারা প্রচুর গণিমতের সম্পদ অর্জন করে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। তাদের সাথে যায় নি এমন এক লোক বলল, অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে উত্তম গণিমত নিয়ে এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি আর কোন সেনাদলকে আমরা ফিরে আসতে দেখি নি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক দলের কথা বলব না যারা এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি উত্তম গণিমত নিয়ে ফিরে আসে? যারা ফজরের নামাজের জামা’আতে হাযির হয়, (নামাজ শেষে) সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহ্ তা’আলার যিকির করতে থাকে, তারাই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তম গণিমতসহ প্রত্যাবর্তনকারী। (তিরমিযি ৩৬৪১)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যথা নিয়মে জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন