হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান করতে হয়। প্রতিবছর হজের সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মুসলমান সৌদি আবরে জড়ো হন। তবে এবার এ ধরনের জড়ো হওয়া হবে না। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার সৌদি আরবে যে হজ অনুষ্ঠিত হবে তাতে সব মিলে এক হাজারেরও কম মানুষ অংশ নেবার সুযোগ পাবেন। সৌদি আরবের সরকার এটি ইতোমধ্যে জানিয়েছে। মূলত এবারের হজটি এক অর্থে প্রতীকি হতে যাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, ইসলামের ইতিহাসে এর আগেও নানা কারণে হজ পালনে ব্যাঘাত ঘটেছে। শুধু ব্যাঘাতই নয়, বেশ কয়েকবার হজ অনুষ্ঠিত হয়নি। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সংঘাত, রাজনীতি এবং মহামারিও ছিল।
৮৬৫ সালে আরাফাত পর্বতে হত্যাযজ্ঞের কারণে হজ পালন বাতিল হয়ে যায়। এ সংঘাতের সময় বাগদাদ ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফতের ইসমাঈল বিন ইউসুফ আরাফাতে পর্বতে আক্রমণ চালায়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হজ চলাকালে এ আক্রমণ করা হয়। এতে অনেক হাজি হতাহত হন। এ পর্বতের উপর থেকে তখন মক্কা দেখা যেত। এর ফলে একেবারে শেষ দিকে এসে হজ বাতিল করা হয়।
৯৩০ সালে বাহরাইন ভিত্তিক কারমানদিয়ান গোষ্ঠীর প্রধান তাহের আল জানাবি মক্কা আক্রমণ করে। এসময় বেশ কয়েক হাজার হাজিকে হত্যা করা হয়। তখন তারা কাবা থেকে হাজরে আসওয়াদ লুট করে বাহরাইনে নিয়ে যায়। হজের সময় এ পাথরটিতে চুমু খায় হজ পালনকারীরা। সেই পাথর লুট হয়ে যাওয়ার পরে প্রায় এক দশক হজ পালন বন্ধ ছিল। তবে কত বছর হজ পালন বন্ধ ছিল সেটি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলছেন, সময়টি ১০ বছরের কম হবে। আবার কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলছেন, এ সময়টি ১০ বছরের বেশি। হাজরে আসওয়াদটি আবার কাবায় ফিরে আনার পর হজ পালন শুরু হয়।
৯৮৩ সালে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে হজ বন্ধ ছিল বলে জানা যায়। এসময় ইরাক ও সিরিয়ার আব্বাসীয় খিলাফত এবং মিশরীয় ফাতেমীয় খিলাফতের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। তীব্র সে সংঘাত এমন একটি জায়গায় শুরু হয়েছিল যেখানে হজযাত্রীরা সে পথে যাতায়াত করতো এবং এটি বহু বছর ধরে চলে। এর ফলে আট বছর মক্কার বাইরে থেকে মুসলমানরা হজে অংশ নিতে পারেননি। এমনটাই বলছেন ইতিহাসবিদরা।
শুধু সংঘাত আর হত্যাযজ্ঞের কারণেই নয় মহামারির কারণেও হজ পালনে ব্যাঘাত ঘটেছিল অতীতে। ১৮৩১ সালে মক্কায় প্লেগের মহামারির কারণে বিপুল সংখ্যক হজপালনকারীর মৃত্যু হয়।
১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ সাল। এই দুই দশকে হজ তিনবার বন্ধ হয়েছিল। ১৮৩৭ সালে মক্কায় আবারো প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এরফলে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ তিন বছর হজ বন্ধ থাকে। এরপর ১৮৪৬ সালে মক্কায় কলেরার প্রাদুর্ভাব হয়। এর ফলে সেখানে ১৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ফলে হজ পালনে ব্যাঘাত ঘটে।
১৮৫৮ সালে বিশ্বজুড়ে কলেরা মহামারির প্রদুর্ভাব হলে মক্কা নগরীতে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। এ কলেরার কারণে লোহিত সাগরের পাড় থেকে মিশরীয় হজযাত্রীরা দলে দলে ফিরে যায়। ফলে হজ পালনে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে।
এদিকে, গত প্রায় ১৬০ বছরের ইতিহাসে এই ২০২০ সালে এসে হজ পালনে সবচেয়ে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন