শবে বরাত বা মধ্য-শাবান (আরবি নীসফে সাবান) প্রতিবর্ণী হচ্ছে হিজরী শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যে পালিত মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ শাবান মাসের মধ্য তারিখের এই রাত। এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল
শবে বরাতের ইবাদত ও তার নিয়ম সম্পর্কে অনেকর অজানা। নিম্নে ফকিহ ও মনীষীদের বর্ণনা অনুযাই শবে বরাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদদের ফকিহ বলা হয়। পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন ফকিহ-মনীষীরাও মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। যেমন-
ফিকহ হানাফির চোখে: আল্লামা শামি, ইবনে নুজাইম, আল্লামা শরমবুলালি, শায়খ আব্দুল হক দেহলবি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবি, মাওলানা আব্দুল হক লাখনবি, মুফতি মুহম্মদ শফিসহ উলামায়ে হানাফিদের অভিমত হলো, শবে বরাতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী রাত জেগে একাকীভাবে ইবাদত করা মুস্তাহান। তবে এর জন্য জামাতবদ্ধ হওয়া যাবে না। (আদ দুররুল মুখতার: ২য় খণ্ড, মারকিল ফালাহ)।
ফিকহে হাম্বলির চোখে: ইমাম ইবনে হাম্বলি (রহ.), আল্লামা মনসুর আল বাহুতি, ইবনে রজর হাম্বলি প্রমুখ হাম্বলি উলামায়ে কেরামের মতে শবে বরাতে ইবাদত মুস্তাহান। (আল মাবদা ২য় খণ্ড। কাশফুল কিনা ১ম খণ্ড)
ফিকহে মালেকির চোখে: ইবনে মালেকি (রহ.) বলেন, সালফে সালেহিনরা এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। (আল মাদখাল ১ম খণ্ড)
আশরাফ আলী থানবি (রহ.) এর চোখে: হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, হাদিসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নত অনুযায়ী করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে। প্রথমত ১৫ তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সঙ্গে সঙ্গে গরিব-মিসকিনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ওই মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভালো হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে অন্য সময় গোপনে দান করে দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত রাত জেগে একা একা বা বিনা দাওয়াতে জড়ো হয়ে যাওয়া দুই-চারজনের সঙ্গে ইবাদত মশগুল থাকা। তৃতীয়ত শাবানের ১৫ তারিখ নফল রোজা রাখা।
ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানির চোখে: ইমান নাসিরুদ্দিন আলবানির (রহ.) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আস সিলসিলাতুস সহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কমিলাহ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে আলোচনা করেছেন । তিনি শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস এনে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা হলো- হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রহ.) থেকে বির্ণত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, অর্থ শাবানের রাতে আল্লাহ তাঁর সব মাখলুকের প্রতি মনোযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সাবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, সুনানে ইবনে মাজাহ।)
আলবানি (রহ.) তার সিলসিলাতুস সহিহার তৃতীয় খণ্ডে এই হাদিসটি সহিত। এটি বিভিন্ন সূত্রে সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন, যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুয়াজ বিন জাবাল (রা.), আবু সালাবা (রা.), আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.), আবু মুসা আশয়ারি (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবু বকর সিদ্দিক (রা.), আউফ বিন মালিক (রা.), আয়েশা (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম।
ওপরে বর্ণিত সবকজন বর্ণনাকারীর হাদিস আলবানি (রহ.) তার কিতাবে আনার মাধ্যমে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন, সারকথা হলো, নিশ্চয় এই হাদিসটি এসব সূত্র পরস্পর দ্বারা সহিহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সহিত হওয়া এর থেকে কমসংখ্যক দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়...
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন