রজব মাস আসলেই মুমিন মুসলমান মেরাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। কেননা মেরাজ ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের অনেক বড় এক প্রমাণ। কিন্তু মেরাজ ছাড়াও রজব মাসে সামর্থবানদের জন্য সুন্নাত ইবাদত হচ্ছে ওমরাহ পালন।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দেশের আকাশে রজব মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মঙ্গলবার ৩০ দিন পূর্ণ হবে আরবি মাস জমাদিউস সানি। আর বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হবে ১৪৪১ হিজরির রজব মাস। সে হিসেবে আগামী ২২ মার্চ (২৬ রজব) রোববার দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ পালিত হবে ।
কুরআনুল কারিমে যে ৪টি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে রজব মাস একটি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার বিধান ও গণনায় আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে মাস ১২টি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত (মাস)। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। (সুরা আত-তাওবাহ : আয়াত ৩৬)
আয়াতে ঘোষিত ৪ সম্মানিত মাসের ব্যাখ্যায় হাদিসের বর্ণনা হলো-
হজরত আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘১২ মাসে বছর হয়। তন্মধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক, আর তা হচ্ছে- জিলক্বদ, জিলহজ, মহররম আর চতুর্থ মাসটি হল- রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি)
রজব মাসের ফজিলতের জন্য উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদিসের বর্ণনাই যথেষ্ট। কেননা ‘আশহুরে হুরুম’ তথা এ মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্ব হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কাল থেকে চলে আসছে।
জাহেলি যুগের যে সব মর্যাদাসম্পন্ন মাসের রুসুম-রেওয়াজ ও কুসংস্কার বিদ্যমান ছিল ইসলামেও সে সকল মাসের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে সকল রুসম-রেওয়াজে সংস্কার এনেছে। মূলকথা, ইসলামে আশহুরে হুরুমে মর্যাদা ও ফজিলত একটি স্বীকৃত বিষয়।
এ মাসে ওমরাহ করা সুন্নাত। হজের সময় ব্যতিত সারা বছরই ওমরাহ করা যায়। তবে রজব মাসে ওমরাহ করা সুন্নাত। তবে এ মাসে ওমরাহ পালনে বিশেষ সাওয়াব লাভের (বেশি/কম) কোনো তারতম্য নেই।
এ মাস আসলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতেন। এ মাস আসরেই বিশ্বনবি তার উম্মাতকে বরকত ও রমজান পাওয়ার জন্য বেশি দোয়া করতে বলতেন। তিনি বলতেন-
اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শা’বান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।’
হাদিসের অনেক বর্ণনায় এসেছে, ‘এ রজব মাসেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ বেশি বেশি রোজা ও নফল নামাজ শুরু করতেন। এ মাসেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক এক নাগাড়ে অধিক রোজা রাখার বেশি প্রমাণ পাওয়া যায়।
রজব ও শাবান মাসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। পাশাপাশি যারা সামর্থবান তাদের জন্য ওমরাহ করও সুন্নাত।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত রজব মাসের শুরু থেকেই রমজান প্রাপ্তিতে বেশি দোয়া করা এবং সম্ভব হলে এ মাসেই ওমরাহ পালন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদার এ মাসে বেশি বেশি নফল নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াতসহ সাদকায়ে জারিয়ামূলক যে কোনো ভালো কাজে অংশ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন