বাংলাদেশে কখন চাঁদ উঠবে এবং ডুববে তা আগেই জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিকে আগেই জানিয়েছিলো স্পারসো। আকাশের মেঘ পরিস্থিতির প্রতিবেদেনও তারা দেয়। কিন্তু প্রথম দফায় ৬৪ জেলার কোথাও চাঁদ ‘চোখে না দেখার’ প্রতিবেদনের কারণে বিপত্তি।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় দফায় চাঁদ দেখার ঘোষণায় আজ (বুধবার) বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের সকালে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ পড়েছেন। বৃষ্টিভেজা দিনে উদযাপন করেছেন মুসলিমদের বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) একজন প্রতিনিধি থাকেন। এবার প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম মিজানুর রহমান। তিনি মঙ্গলার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বৈঠকের শুরুতে আমাদের বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন জানিয়ে দিই। আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৪০মিনিটে বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ উঠেছে এবং ৭টা ৫১ মিনিটে চাঁদ ডুবেছে। বাংলাদেশের আকাশের প্রায় সব জায়গায়ই মেঘ ছিলো। শুধু পঞ্চগড়ের দিকে আকাশটা একটু পরিস্কার ছিলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে আকাশে মেঘের অবস্থা বলি। আর এস্ট্রোনোমিক্যাল হিসেব থেকে চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার সময়, স্থায়িত্ব ও চাঁদের আকার সম্পর্কে বলি। মঙ্গলবার চাঁদের ভিজিবিলিটি ছিলো মাত্র শতকরা ১ ভাগ। চাঁদের যে আকার তার ১ ভাগ দেখা গেছে। এটা খালি চোখে দেখা ছিল খুবই কঠিন। বাংলাদেশ থেকে চাঁদের অবস্থান ছিলো ৩৭ হাজার কিলোমিটার দূরে। আকাশে চাঁদের অবস্থানও ছিলো অল্প সময়।’
তিনি জানান,‘তবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে কিনা তার সিদ্ধান্ত হয় ধর্মীয় নিয়মের ভিত্তিতে। মঙ্গলবার সে কারণেই একবারও বলা হয় চাঁদ দেখা যায়নি। পরে আবার দেখা যাওয়ার কথা জানানো হয়। এই দেখা বলতে চোখে দেখাকে বোঝানো হয়।’
চাঁদ দেখা কমিটির আরেকজন সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি ঢাকার জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। তিনি বলেন,‘রোজা ৩০টা পূর্ণ হলে চাঁদ দেখা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকে না। ৩০ রোজার পরই ঈদ হবে। কারণ আরবি মাস ৩০ দিনের বেশি নেই। কিন্তু রোজা ২৯টা হলে, আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে কমপক্ষে দুই জন দায়িত্বশীল ব্যক্তির চাঁদ চোখে দেখতে হবে। তাদের এই দেখার বিষয়টি যদি ওলামায়ে কেরামদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে চাঁদ দেখা গেছে বলে ধরে নেয়া হবে। আর আকাশ পরিস্কার হলে খোলা মাঠে সবাই মিলে চাঁদ দেখতে হবে। এটাই ইসলামের বিধান। ২৯ তারিখে যদি আবহাওয়া বা অন্যকোনো কারণে কেউই চাঁদ না দেখেন তাহলে ৩০ রোজা পূর্ণ বরতে হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে চাঁদ ওঠার কথা বলা হলেও গ্রহণযোগ্য হবে না। এটাই ইসলামের ব্যাখ্যা।’
গত মঙ্গলবারের চাঁদ দেখা নিয়ে তিনি বলেন,‘রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও থেকে চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়নি। এই ঘোষণা দেয়ার পর যখন মানুষ এটা জানতে পারে তখন কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট ও নিলফামারী থেকে কেউ কেউ দেখেছেন বলে খবর আসে। তখন আমরা সেটা নিশ্চিত হয়ে রাত সাড়ে ১১টায় চাঁদ দেখার ঘোষণা দিই।’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘২৯ রোজায় যদি বৈজ্ঞানিক ভাবেও চাঁদ দেখা যায়। আর সারাদেশের কেউ চাঁদ চোখে না দেখেন তাহলে হবে না। রোজা ৩০টি পূর্ণ রতে হবে।’
স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম মিজানুর রহমান বলেন,‘আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে পারি কখন চাঁদ দেখা যাবে। কিন্তু মেঘলা আকাশ বা দুর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়ার মধ্যেও আমাদের এখানে সরাসরি খালি চোখে চাঁদ দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক বাইনোকুলার দরকার হয়। আমরা এখন এধরনের একটি প্রজেক্ট নিয়ে চীনের সাথে কাজ করছি। এটা বাস্তবায়ন হলে চোখে চাঁদ দেখার এই সমস্যা থাকবে না।’
ডয়চে ভেলে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন