করোনার সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বিশ্ব
বছরজুড়ে গোটা বিশ্বে ৫৪ মিলিয়ন মানুষ আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ত্রাণ সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা বিশেষত বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর দ্বৈত প্রভাব নিয়ে হাজির হয়েছে।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি লিখেছে, আমাদের বিশ্লেষণটি বিশ্বের বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে শক্তিশালী ওভারল্যাপের দিকে ইঙ্গিত করে। জলবায়ু সংকট ও দারিদ্র্য হ্রাসের মতো বিস্তৃত উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে থেকে আমরা মহামারি ও এর বিচ্ছিন্নতার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করতে পারি না। বন্যা, খরা, ঝড় ও দাবানলের কবলে পড়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে আরো ৪৩২ মিলিয়ন মানুষ মহামারির সময়ে প্রচণ্ড উত্তাপের মুখোমুখি হয়েছে।
ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সেসকো রোকা বিশ্বনেতাদের প্রতি বর্তমানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তহবিলগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ দুই সংকটে কয়েক মিলিয়ন মানুষ ভুগছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করুন, সেটা সবুজ ও স্থিতিস্থাপক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফেডারেশনের ওই প্রতিবেদনটিতে ২০২০ সালে ১৩২টি আবহাওয়া-সংক্রান্ত বিপর্যয় বিশ্লেষণ করেছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বন্যা ও মহামারির সঙ্গে ৯২টি শক্তিশালী ওভারল্যাপ খুঁজে পেয়েছে বিশ্বজুড়ে কাজ করা সংস্থাটি। মার্চ মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবকে মহামারি হিসেবে ঘোষণার পর এগুলো ঘটেছে। আবার কিছু দেশে মহমারি ঘোষণার আগেই কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব বিস্তৃত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব মোকাবেলা করেছে।
মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ দ্বৈত প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে। দেশ দুটিতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ মহামারির পাশাপাশি বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে। যেমন মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশ দুটিতে ১২৯ জন নিহত হয়েছিল।
রোকা বলেছেন, পূর্ব আফ্রিকার কিছু দেশ মহামারির সঙ্গে পঙ্গপাল ও বন্যার ত্রিমুখী প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছিল। এতে করে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং অনেক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। যদিও সেখানে সামাজিক দূরত্ব পালন করা সম্ভব ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি ও আবহাওয়া-সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ওভারল্যাপ চিহ্নিত হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলের বনে দাবানল। এ ঘটনায় প্রায় সাত মিলিয়ন একর জড়ি পুড়ে গেছে এবং দেশটি তার জনসাধারণকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, দাবানলটি যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
রোকা বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী হতে পারি কিনা তা নির্ধারণ করবে। জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস করতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপগুলো ঝুলে থাকতে পারে না।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন