আষাঢ় এলেই মেঘলা আকাশ, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। আবার কখনও বা মুষলধারে। এবারও এর ব্যতিক্রম নেই। আজ ২৯ আষাঢ়, বৃষ্টির মৌসুম ফুরালো এমনটা স্বাভাবিকভাবে বলা যেতেই পারে। এখন দেখা যেতেই পারে কেমন ছিল ১৪২৭ ও ১৪২৬ সনের আষাঢ়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবার আষাঢ়ে বৃষ্টি গতবারের তুলনায় খানিকটা বেশি। সামনে শ্রাবণে এই ধারা অব্যাহত থাকলে অতিবর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এরমধ্যেই বন্যা দেখা দিয়েছে দেশের একটি অঞ্চলে।
গত দুই বছরের বর্ষা মৌসুমের তুলনামূলক চিত্র বলছে, ঢাকাসহ দেশের মধ্য অঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর আর দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোয় বৃষ্টির মাত্রা বেশি। তবে সিলেটে গত বছর যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়ছিল তার আশেপাশেই ঘুরছে। চট্টগ্রামে বৃষ্টির পরিমাণ কম।
আবহাওয়া অধিদফতরের ২০১৯ ও ২০২০ সারের মে মাসের বৃষ্টিপাতের তুলনামূলক চিত্র বলছে রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশালে গতবছরের তুলনায় বৃষ্টি বেশি হয়েছে। রংপুর ও সিলেটে প্রায় একই আর চট্টগ্রামে পরিমাণে কম বৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহীতে গতবছর মে মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল গড়ে ১৪০ মিলিমিটার। যা এবছরের মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৭ মিলিমিটার। গতবছর এই সময়ে ঢাকায় ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩০০ মিলিমিটার। ময়মনসিংহে ৪০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ৫৬৩ মিলিমিটার। খুলনায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ২৪৬ মিলিমিটার। বরিশালে ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ২৭১ মিলিমিটার। সিলেটে ৬৫০ মিলিমিটার এবং চলতি বছর ৬৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রংপুরে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর হয়েছে ৩৪৬ মিলিমিটার। চট্টগ্রামে ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর তা কমে হয়েছে ১১৯ মিলিমিটার।
গতবছরের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে রাজশাহী ও ঢাকায় বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। তবে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনায় চলতি বছরে পরিমাণ অনেক বেশি, ময়মনসিংহহে কিছুটা বেড়েছে, সিলেটে কমেছে।
গতবছরের জুন মাসে রাজশাহীতে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল গড়ে ১৩০ মিলিমিটার, যা এবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৪ মিলিমিটার। ঢাকায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ২৭১ মিলিমিটার। চট্টগ্রামে ১৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৪০৬ মিলিমিটার। ময়মনসিংহে ৩১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৪৪০ মিলিমিটার। সিলেটে ৮০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৬৬৬ মিলিমিটার। রংপুরে ২৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৩১৬ মিলিমিটার। খুলনা ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৪৫ মিলিমিটার। বরিশালে ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৫৪ মিলিমিটার।
জুলাই মাসের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বৃষ্টি কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। গতবছর জুলাইয়ে রাজশাহীতে বৃষ্টি ছিল ২৫৪, ঢাকায় ৩৬৮, চট্টগ্রামে ১১০৫, ময়মনসিংহে ৫৮৫, সিলেটে ৬৩৮, রংপুরে ৬১২, খুলনায় ৩২৫ এবং বরিশালে ৪৪৭ মিলিমিটার।
বৃষ্টির বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জলবায়ু বা পরিবেশের কোনও প্রভাব আছে কিনা জানতে চাইলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে প্রকৃতির পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে কখনও গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে আবার কখনও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টির পরিমাণেরও পার্থক্য হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তো এই অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের বিরূপ প্রভাবে আজকের এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও এখানে নানান ধরনেরই আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাবে।’
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, গতবছর স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর বৃষ্টি যা হচ্ছে তা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক। তবে জুলাইয়ে বৃষ্টি হলে পরিমাণ বেশি হয়ে যেতে পারে। প্রতিবছর এই সময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। এইবার মৌসুমী বায়ু অনেক বেশি সক্রিয়। এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। তাই বার বার সতর্ক সংকেত দিতে হচ্ছে। বৃষ্টি কারণে বন্যা পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা নিশ্চিত করে না বলা গেলেও নদীর পানি অনেক বেড়ে যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন