মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেলসহ চলমান কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর এমন কোনও রাস্তা নেই যে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হচ্ছে না। এর পাশাপাশি গাড়ির কালো ধোঁয়া তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার দূষণ। বর্ষা মৌসুমে বাতাসের মান ভালো থাকলেও শীত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ দিকে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি দপ্তরগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও নেই।
ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা। ঢাকার রাস্তায় বের হলেই মনে হচ্ছে কুয়াশায় ঢেকে গেছে পুরো শহর। মানুষেরই চোখ জ্বলছে, শ্বাস নিতে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে। শীত না এলেও দুপুরেও কুয়াশায় ঢাকা। কিন্তু সাধারণ মানুষের চোখে এটি কুয়াশা মনে হলেও আবহাওয়াদিবেরা বলছেন এটি বায়ুদূষণের ফল। বায়ু দূষণের ফলে কমছে মানুষের গড় আয়ু। বিশেষ করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশী শিশু ও বয়স্কদের।
বায়ুর মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর শীর্ষ বায়ু দূষণের শহরের একটি ঢাকা। ভারতের 'গ্যাস চেম্বার' আখ্যা পাওয়া দিল্লির বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত হয়ে পড়েছে ঢাকার বাতাস। বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী টানা তিনদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষে ছিল ঢাকা। বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়াল প্রতি দিনই বায়ুর মান নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। এ তথ্য প্রকাশ করা হয় প্রতি ঘণ্টায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণী, উত্তরা ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সব সড়কেই উড়ছে ধুলা। মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাসানটেক যাওয়ার সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি সম্প্রসারণ হচ্ছে, পাশাপাশি চলছে নিষ্কাশন নালা বসানোর কাজ। বর্ষায় কাদা আর শুকনো মৌসুমে ধুলা এ নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চলতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।
এই সড়কে প্রতিদিন সকালে একবার পানি ছিটিয়ে যায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি। কিন্তু রোদে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর আবার ধুলায় ডুবে যায়।
একই অবস্থা মিরপুরের কালসী রোড, ইসিবি চত্বর, মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায়। এছাড়া উত্তরার বিভিন্ন সড়কেও ধুলার উপদ্রব দেখা গেছে। পুরান ঢাকার লালবাগ, আজিমপুর, চকবাজার, বেগমবাজার, ইমামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে ধুলা উড়তে দেখা গেছে।
মিরপুরের বাসীন্দা সফিউল্লাহ কায়সার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে বাসে করে অফিসের উদ্দেশ্যে মতিঝিল যাওয়ার সময় কত ধুলা নাকে আসে তার কোনও হিসেব নেই। শীত আসার আগেই এবার ধুলায় যেন রাজধানী ছেয়ে গেছে। গত একমাসে ওয়াসার গাড়িতে আমি অন্তত দুইবার দেখেছি রস্তায় পানি দিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সয়ের শিক্ষার্থী মাসুদ বিন আবদুল্লাহ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, খালি চোখে এতদিন যে ধুলাগুলো দেখা যেতনা আজ সবাই চোখেই তা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এমন পরিসস্থিতির মধ্যেও সরকার কিংবা নীতি-নির্ধারকের কোনও ভূমিকায় নেই।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে স্বাধীন পরিবহনের বাস চালক দেলোয়ার হোসেন জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাস চালান। সারাদিনের ধুলার মধ্যে গাড়ি চালানোর পরে রাতে ভালোমতো ঘুমাতে পরেনা। খাওয়ার রুচিও কম। এমন অবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে- ডাক্তার তাকে পরামর্শ দেন মাস্ক পড়ে রাস্তায় বের হওয়ার।
ফার্মগেট সড়কের বাসিন্দা জাকির আলম বললেন, ধুলার কারণে পথ চলতেও সমস্যা হয়। আমি প্রায়ই সাইকেলে চলাফেরা করি। কিন্তু ধুলার কারণে আমার সাইকেল চালাতে খুবই সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে কিছুই দেখিনা। বেশি বিপদে পড়ি বাচ্চকে সাথে নিয়ে বের হলে। চোখে ধুলাবালি গেলে সে খুবই অস্বস্তিতে পড়ে।
আসাদগেট ট্র্যাফিক বক্সের সার্জেন্ট মোল্লা আহসান হাবীব ব্রেকিংনিউজকে বলেন, রাস্তার ধুলার কারণে ৮ ঘন্টার ডিউটিতে শুধুমাত্র খাওয়ার সময় ছাড়া সবসময় মাস্ক ব্যবহার করি। মাঝে মধ্যে শ্বাস নিতে সমস্যাও হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের ডিউটি যেহেতু রাস্তায় কষ্ট করেই জীবন চালাতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ধুলা দূষণের কারণে দেশের মানুষদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ গত ৫ বছরে অত্যাধিক বেড়েছে। ২০১৫ সালে বিভিন্ন ধরনের অ্যাজমায় সারা দেশে আক্রান্ত হন ৩৩২৬ জন। ওই বছর এ রোগে মৃত্যু হয় ৫৬ জনের। ২০১৬ সালে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২২ হাজার ৮৩ জন এবং ১০৯ জন। ২০১৭ সালে আক্রান্ত ছিল ৬৩ হাজার ৬০৮ জন এবং মৃত্যু ৩২৮ জন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৭ হাজার ৭২২ জন এবং মৃত্যু ৬১৪ জন।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ না হতেই আক্রান্ত রোগী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৮০৬ জনে এবং এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৮৮ জনের। অর্থাৎ মাত্র ৫ বছরেই ধুলা দূষণের কারণে অ্যাজমায় আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।
একইভাবে ২০১৫ সালে সিওপিডিতে আক্রান্ত হন মাত্র ১৬১০ জন এবং মৃত্যু হয় ৩১ জনের। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮৮০৪ জন এবং ২০৬ জন। ২০১৭ সালে ৩২ হাজার ৪০৮ জন এবং মৃত্যু ৬৮৫ জন। ২০১৮ সালে ৭৭ হাজার ৭২২ জন এবং মৃত্যু ৬১৪ জন।
চলতি বছর ডিসেম্বরের ১০ দিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৮০৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৮৮ জনের। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে সিওপিডিতে আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরে এআরআই-এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ২২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ.কে.এম. শামছুজ্জামান বলেন, অ্যাজমা হল একধরনের শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। যা জন্মগত বা পারিবারিক কারণে হয়ে থাকে। তবে দূষণজনিত কারণে মানবদেহের শ্বাসনালিগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে। ওই পর্যায়কে সিওপিডি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এআরআই হল শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন। এগুলো থেকে হতে পারে লাং ক্যান্সার বা ফুসফুস ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, এমনিতেই ঢাকার মাটি বালুমিশ্রিত। তাই বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যাপক ধুলা বাতাসে ওড়ে। উন্নত দেশগুলোতে নির্মাণকাজের স্থানকে পুরোপুরি ঢেকে রাখা হয়। যাতে আশপাশে ধুলা না যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকারও হাউজিং কোম্পানিগুলো ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজে জড়িতদের এমন নির্দেশনা দিতে পারে। কিন্তু সরকার এসবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যতদিন গুরুত্ব না দেবে ততদিন বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. রাসেল সাবরিন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্মল বায়ু প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প আছে। যেটা ঢাকা শহরকে দূষণমুক্ত করার জন্য কাজ করছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে যে পার্কগুলো ছিল সেগুলোকে নতুন আঙ্গিকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বনায়ন করেছে। যেটাকে আমরা সবুজায়ন বলতে পারি। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ক্যামিকেল কারখানাগুলোর স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো অনেকগুলো প্রকল্প চলমান আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি রিচার্স অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের প্রকল্প ম্যানেজার এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, বায়ুদূষণের ঘটনা দুইভাবে ঘটে৷ একটি হলো- 'ক্ষুদ্র কণিকার কারণে৷' আরেকটি হলো- 'নানা কেমিকেল ও দূষিত পদার্থের কারণে৷' বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কণিকার মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি৷
তিনি বলেন, এই বায়ুদূষণ রোধে সরকারের উদ্যোগ তেমন দৃশ্যমান নয়৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তেমন দক্ষ এবং তৎপর নয়৷ দূষণ পরিমাপে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাও তত আধুনিক নয়৷ সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই বললেই চলে৷
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বেগম রুবিনা ফেরদৌসী বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমরা কয়েক দফা ধুলা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে গিয়ে মানমাত্রার চেয়ে বেশি ধুলো পায়; যে কারণে আমরা জরিমানা করেছি।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনো একটি এলাকা বাতাসে এসপিএম বা ধূলিকণার পরিমাণ (এসপিএম) প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে সর্বোচ্চ ২০০ মিলিগ্রাম থাকার কথা। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস প্রকল্প এলাকার আগারগাঁও এলাকায় প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে এসপিএম পাওয়া যায় ৮২০ মিলিগ্রাম, মিরপুর দশ নম্বর গোলচত্বরে ৭৬৪ ও বনানী মোড়ে ৬০৫ মিলিগ্রাম। এই মাত্রায় ধূলিকণা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।
বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা খারাপ৷ এটা অস্বীকার করে কোনও লাভ নেই৷ ঢাকার বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশ কারণ শহরের আশেপাশের ইটভাটা৷ এরপর রয়েছে নির্মাণকাজ৷ নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলা যুক্ত হয়৷ এরপরে রয়েছে যানবাহনে ব্যবহৃত জ্বালানি৷ এছাড়া নতুন একটি কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, তা হলো বর্জ্য পোড়ানো৷
তিনি আরও বলেন, আমরা বায়ুদূষণ মনিটর করি৷ ঢাকাসহ সারাদেশে ১৭টি পয়েন্টে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা আছে৷ আমাদের যন্ত্রপাতি আছে৷ তবে বায়ুদূষণ কমিয়ে আনায় আমাদের একক কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই৷ দূষণের জন্য আরো অনেক কিছু দায়ী, যেখানে আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই৷ এখানে সমন্বয়ের অভাব আছে৷ আর সচেতনতা তৈরির কাজও কার্যকরভাবে হচ্ছেনা বলেও মনে করেন তিনি৷
এক জরিপে দেখা যায়, বায়ু দূষণের কারণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ১.২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে একযোগে প্রকাশিত বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চারপাশের বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশিদের আয়ু প্রায় ১.৩ বছর কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) যৌথ উদ্যোগে বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণযুক্ত পরিবেশে কোনো শিশু বেড়ে উঠলে তার গড় আয়ু ৩০ মাস (২.৫ বছর) পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯প্রতিবেদন তৈরি করার সময় ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বে বায়ুর গুণগতমান বিষয়ক তথ্য নিয়ে কাজ করা হয়।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত এলাকা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। মৃত্যুঝুঁকির অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি, অ্যালকোহল অপব্যবহার ও কায়িক পরিশ্রম কম করা প্রভৃতি। তবে অন্যান্য ঝুঁকিগুলোর চেয়েও বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ মৃত্যুর জন্য অধিকতর দায়ী।
বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। এশিয়ার বায়ু গুণমান অনেক খারাপ, বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণ ১৯৯০ সাল থেকে পিএম ২.৫ মাত্রার মধ্যে বসবাস করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুতে পিএম ২.৫ উপাদানের কারণে বিশ্বে তিন মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের অর্ধেকের বেশি মানুষ ভারত ও চীনে বসবাস করত। এসব মৃত্যুর জন্য বিশ্বে শীর্ষে থাকা বায়ু দূষণকারী দুই দেশ- ভারত ও চীন দায়ী।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান পৃথিবীর দূষিত দেশের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এসব দেশের বায়ু দূষণের কারণে ১.৫ মিলিয়নের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
সার্বিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী বায়ু দূষণের ফলে স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুস ক্যান্সার ও ফুসফুসের রোগে প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর জন্য সরাসরি পিএম ২.৫ উপাদান দায়ী বলে দাবি করেছে বিশেষজ্ঞরা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন