বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে উঠেছে রাজধানীর বাতাস। এরই মধ্যে ঢাকার বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
মেট্রোরেলসহ চলমান কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার দূষণ। বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজুয়ালের গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার তথ্য এলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
আদালত ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে ধুলাপ্রবণ এলাকাগুলোতে দিনে দু’বার পানি ছিটানোসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিলেও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি। শীত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে। কিন্তু তা সামাল দিতে সরকারি দফতরগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলেছেন।
পরিবেশ অধিদফতর বলছে, চলতি মাসের শুরুতেই ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় পৌঁছে যায়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। তারপর আবার তা বাড়তে শুরু করে এবং ১৩ নভেম্বর তা ২৩০ পিপিএমে, অর্থাৎ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় পৌঁছে যায়।
অধিদফতরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, গাড়ির ধোঁয়া ও আশপাশের ইটের ভাটাগুলোর কারণে প্রতিবছর এ সময় বায়ুদূষণ বেড়ে যায়।
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব সড়কেই উড়ছে ধুলা। মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাসানটেক যাওয়ার সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি সম্প্রসারণ হচ্ছে, পাশাপাশি চলছে নিষ্কাশন নালা বসানোর কাজ।
এ সড়কে প্রতিদিন সকালে একবার পানি ছিটিয়ে যায় সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি। কিন্তু রোদে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর আবার ধুলায় ডুবে যায়। একই অবস্থা মিরপুরের কালশী রোড, ইসিবি চত্বর, মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায়। উত্তরার বিভিন্ন সড়কেও ধুলার উপদ্রব দেখা গেছে।
পুরান ঢাকার লালবাগ, আজিমপুর, চকবাজার, বেগমবাজার, ইমামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে ধুলা উড়তে দেখা গেছে। বাণিজ্যিক এলাকা ইমামগঞ্জ, বেগম বাজার, চকবাজারে মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে আসে ধুলা।
শীতে বাতাসের মান খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি হতে পারে।
এ ছাড়া চর্মরোগ, বয়স্ক মানুষের শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা হয়। বিশেষ করে বাচ্চারা এবং বয়স্করা বায়ুদূষণের কারণে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
এদিকে ধুলা রোধে দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন নাগরিকরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পানির নিজস্ব কোনো উৎস নেই। ওয়াসার পাম্প থেকে পানি নিয়ে বিভিন্ন সড়কে ছিটায় ডিএসসিসির ১১টি গাড়ি। কিন্তু এ বছর ওয়াসা পানি না দেয়ায় সড়কে পানি ছিটানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম।
পানি ছিটানোয় দক্ষিণের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এখানকার ১২টি ওয়াটার বাউজার ৪০০-৫০০ কিলোমিটার এলাকায় দিনে দু’বার পানি ছিটানো হয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির যান্ত্রিক বিভাগের শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন