আবারো বাড়ছে ঠাণ্ডা। দুই বিভাগের সম্পূর্ণ অংশ এবং অন্য তিন বিভাগের কিছু অংশ মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করছে। ১৯৪৮ সাল থেকে আবহাওয়া অফিস আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের পর থেকে গত ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়। সেদিন তেতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬৮ সালে চা বাগার বেষ্টিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা নেমেছিল ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য গত ৮ জানুয়ারিতে সৈয়দপুরেও তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ নেমে যায় ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে তাপমাত্রা নামে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশ বাংলাদেশ। এখানে শীতে এতো তাপমাত্রা নামে না। কিন্তু হঠাৎ করে ৫০ বছর পর এতো তাপমাত্রা নেমে গেল কেন? এ প্রশ্নের জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি এবং জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর মেরিন অ্যান্ড এ্যাটমসফেরিক রিসার্চের প্যাসিফিক ইএনএসও এপ্লিকেশন ক্লাইমেট সেন্টারের প্রধান গবেষণা বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে হঠাৎ তীব্র শীতের অনেকগুলো কারণ এর পেছনে কাজ করছে। প্রথমত: দুর্বল লা নিনার সৃষ্টি হওয়া, মেরু অঞ্চলের ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহ (আর্কটিক সার্কোলেশন) সৃষ্টি এবং জেট স্ট্রিমকে দায়ী করছেন আবহাওয়া গবেষকেরা। এর সাথে মেরু অঞ্চলে শুরু হয়েছে হিম শীতল বায়ু প্রবাহ (ভোরটেক্স)। ভোরটেক্স ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরে মেরু অঞ্চলের কাছে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহ ধরে রাখতে সহায়তা করে। মেরু অঞ্চলের বিশাল এলাকার লঘুচাপ এবং ঠাণ্ডা বায়ু গ্রীষ্মকালে দুর্বল হয়ে যায় এবং শীতকালে শক্তিশালী ও প্রসারিত হয়ে জেট স্ট্রিমের সাথে দক্ষিণ দিকে তাড়িত হয় ঠাণ্ডা বায়ুর সাথে। ২০০০ সাল থেকেই জেট স্ট্রিম দুর্বল এবং গতি ধীর হতে শুরু করে। যখন এরকম ঘটে তখন মেরু অঞ্চলের বায়ু দক্ষিণ দিকে এবং কোনো কোনো সময় একেবারে দক্ষিণ দিকে নেমে যায়। চলতি জানুয়ারি মাসের চরম ঠাণ্ডা পড়ার পেছনে এটাও কারণ। এরকম ঘটনা ২০১৪’র জানুয়ারি মাসেও ঘটেছিল এবং আরো পেছনে ১৯৮৯, ১৯৮২ এবং ১৯৭৭ সালে এমন ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞানী রাশেদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, বাংলাদেশে তীব্র শীতের আরো একটি কারণ ঘটে থাকতে পারে। সেটা হলো মেডেন জুলিয়ান অসিলেশান (এমজেও) নামে একটি প্রক্রিয়া। এটা বিষুব রেখার (২৩.২৭ ডিগ্রি অক্ষাংশ) চারদিকে প্রতি ৩০ থেকে ৬০ বছর অন্তর অন্তর পুর্বদিকে চলে। এ বছরের বিরাজমান লা নিনা এমজেও-কে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার দিকে পূর্ব দিকে ঘুরতে বাধা দিচ্ছে। ফলে বর্তমান ঠাণ্ডা অবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এমজেও’র এ অবস্থা বাংলাদেশের বর্তমান তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার জন্য আরেকটি প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বর্তমান শীতের কারণ হিসেবে সাইবেরিয়া থেকে আসার ঠাণ্ডা বায়ুকে দায়ী করছে।
আবহাওয়া অফিস অবশ্য এ মাসের শুরুতে আবহাওয়া মাসব্যাপী পূর্বাভাসে আরো শৈত্য প্রবাহের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। তবে বর্তমান শীতটা হয়তো এর আগেটার চেয়ে কিছু কম দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ দিবাভাগের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সূর্য আগের চেয়ে কিছুটা বেশি তাপমাত্রা ছড়াতে পারছে। ধীরে ধীরে আরো তাপমাত্রা বাড়বে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই দিনের বেলা অনেকটা উষ্ণ হয়ে উঠবে।
আজ সারাদিনই রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এবং মাদারীপুর, গোপালগঞ্চ, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও বরিশাল অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ছিল কক্সবাজারে ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন