রাজশাহীতে শিশু দুই বোনের মৃত্যুর কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। বাবা-মাসহ মৃত শিশুদের রোগের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও রোগ নির্ণয়ে এখনো ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থায় নতুন ভাইরাস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। এজন্য চিকিৎসকদের সতর্কতার সঙ্গে রোগীদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গত ১৩ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি দুই বোনের মৃত্যুর পর অজানা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরই মধ্যে জানা যাচ্ছে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শিশুদের জন্য নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে তিনগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশের অনেক অ্যান্টিবায়োটিক রোগীদের ওপর কাজ করছে না। এ ছাড়া সামান্য জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত শিশুদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়ছে।
শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি থাকে। শীতের সময় শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হাঁপানি, ডায়রিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ বছরও একই চিত্র। হাসপাতালে নির্ধারিত তিনটি শিশু ওয়ার্ডে ১৫০টি শয্যা রয়েছে। যার বিপরীতে ভর্তি শিশু রোগী প্রায় ৫০০।
হাসপাতালের ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ৩৪টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২০০ জনের বেশি। এ ছাড়া ১ হাজার ২০০ শয্যার এই হাসপাতালটির ৬০টি ওয়ার্ডে গড়ে রোগী ভর্তি থাকছে ২ হাজারের বেশি। প্রতিদিন গড়ে যে সংখ্যক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে, তার দ্বিগুণ আবার এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
পুরনো ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াগুলো রূপ বদল করার কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন রামেক হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহিদা ইয়াসমিন। অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক একেবারে কাজ করছে না। একটা অ্যান্টিবায়োটিক যখন ড্রাগ রেজিটেন্স হয়ে পড়ছে, তখন হায়ার অ্যান্টিবায়োটিকে যেতে হচ্ছে। আমাদের হাতে অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যাও সীমিত। এসব আমাদের মতো চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলছে।’
শিশু দুই বোনের মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করা জরুরি বলে মনে করেন রামেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সল আলম। তিনি বলেন, পুরনো ভাইরাসে তাদের মারা যাওয়ার কারণ হতে পারে না। তা ছাড়া এটা যদি ছোঁয়াচে হয়, তবে তা হবে আরও দুশ্চিন্তার কারণ।
রোগের ধরন বদলে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী। তিনি বলেন, রোগের প্যাটার্ন বদলাচ্ছে। আক্রান্তকারী জীবাণুও পরিবর্তন হচ্ছে। করোনা, ডেঙ্গু ও নিপা- এগুলো ভাইরাসজনিত রোগ। সম্প্রতি দুই শিশু মারা গেছে। আমরা ভেবেছিলাম তারা নিপা ভাইরাসে মারা গেছে। পরে দেখা গেল নিপা নয়। এটা আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে। একটা রোগের প্যাটার্ন জানা থাকলে আমাদের চিকিৎসা দিতে সুবিধা হয়। এখন যে কোনো জ্বর হলে সতর্ক হতে হবে। এখন তো সামান্য জ্বর-সর্দি বা খিঁচুনি নিয়ে শিশুরা ভর্তি হলেও আমরা চিকিৎসকরাও ভয় পেয়ে যাচ্ছি। সতর্কতার সঙ্গে রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। এমন কেস হতে থাকলে আমাদের পৃথক প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য অবশ্যই পৃথক গবেষণা করতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন