বছরপূর্তি হতে চলেছে করোনা আগমনের! ইতোমধ্যে সাড়ে চার কোটির ঘরে আক্রান্ত। মারাও গেছে কম নয়; প্রায় ১২ লাখ। যদিও সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও অনেক, সেটাও ৩ কোটি ছাড়িয়েছে। গত এক বছরে মানুষের মৃত্যু, নানা দুর্ভোগের সাথে অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তারপরও মানুষ আশা-নিরাশার দোলায় পার করে দিচ্ছে দিন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটার আশায় রয়েছে বিশ্ববাসী, তা হলো করোনার টিকা।
করোনার বেশ কয়েকটি টিকা পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। এখন শুধু ফলাফলের অপেক্ষা। টিকা তৈরিতে সামনের সারিতে রয়েছে দুই জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মডার্না ও ফাইজার। কয়েক সপ্তাহ বাদেই তারা পরীক্ষায় থাকা টিকার ফলাফল পাওয়ার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনার টিকা পাওয়ার আশা আরও বেড়েছে।
মডার্না ও ফাইজারের টিকা ছাড়াও অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার যৌথ টিকাটি নিয়েও আশার কথা শোনা যাচ্ছে। এ টিকাটি বয়স্ক ও তরুণদের মধ্যে প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখিয়েছে বলে অ্যাস্ট্রোজেনেকার গবেষকেরা দাবি করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্দান্ত গতিতে টিকা তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। যেখানে টিকা তৈরিতে ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যায়, সেখানে দ্রুত টিকা বাজারে পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্স সংশয় প্রকাশ করে বলেছে, প্রথম প্রজন্মের টিকা সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের এখন ১৫০টির বেশি টিকা উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ টি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ১১ টি টিকা পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।
মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার এর আগে বলেছিল তারা অক্টোবরের মধ্যেই করোনার টিকার ফল জেনে যাবে। কিন্তু এখন তারা আশা প্রকাশ করে বলেছে, এ বছরের মধ্যে তাদের টিকার ফল জানা যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি টিকা পরীক্ষা ঠিকঠাক মতো চলে এবং টিকার অনুমোদন পায় তবে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পারবে তারা।
ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন, ‘টিকা অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। এর মধ্যে রয়েছে টিকার কার্যকারিতা জানার বিষয়টি। আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। যদি সবকিছু ঠিকমতো চলে আমরা প্রাথমিক ডোজ সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত থাকব।’
বোরলা এ বছরের মধ্যেই করোনার টিকা সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে পরিমিত আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, টিকার কার্যকারিতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এখনো ফাইজার মূল মানদণ্ডে পৌঁছেনি। তারা নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে টিকাটির জরুরি অনুমোদনের জন্য আবেদন করার কথা ভাবছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইজারের পাশাপাশি করোনার টিকা নিয়ে আশার খবর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না। তাদের এমআরএনএ-১২৭৩ টিকাটির ফলাফল আগামী মাসে জানাতে পারবে বলে আশা করছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি টিকাটির ইতিবাচক ফল পাওয়া যায় তবে ডিসেম্বরের শুরুতে এর জরুরি অনুমোদন মিলতে পারে। বছরের শেষ নাগাদ তাদের পরীক্ষামূলক টিকাটির ২ কোটি ডোজ উৎপাদনের দিকে নজর রাখছে মডার্না। দ্রুত অনুমোদন পেতে মডার্না ইতিমধ্যে তাদের টিকাটির অনুমোদনের জন্য যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে স্বাধীন মূল্যায়ন শুরু করেছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে যেসব হালনাগাদ সুখবর পাওয়া যাচ্ছে তাকে স্বাগত জানাচ্ছে সংস্থাটি। তবে টিকাটি ব্যাপকভাবে পাওয়া ক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকার সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত বয়স্কদের প্রতিরোধী ক্ষমতা কম শক্তিশালী। আশা করি ভবিষ্যৎ টিকাগুলো নিরাপদ ও কার্যকর হবে এবং উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এসব বয়স্ক মানুষকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন